কামরুলকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ফেরত আনা হবে
সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলামকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
urgentPhoto
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে চারদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ কথা জানান।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, কামরুলের প্রত্যাবর্তনে আর কোনো বাধা নেই। সৌদি রয়েল কোর্ট এ ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছে। যার অনুলিপি ইন্টারপোলকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন ইন্টারপোল কামরুলের ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট তৈরি করতেই যেটুকু দেরি। আশা করা যাচ্ছে আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যেই কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে।
এ সময় বিভিন্ন দেশে অবৈধ অভিবাসন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসন কোনো রাষ্ট্রের একক সমস্যা নয়। অতিসম্প্রতি মধ্যপ্রাচের যুদ্ধ বিগ্রহ এবং আইএসের হত্যাযজ্ঞের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুনভাবে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ এটার একটি ভুক্তভোগী একটি রাষ্ট্র। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বহুপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এই কয়েকদিন থেকে যা দেখছি, তা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘে আলোচনা করা হবে। এখানে পৃথিবীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিশালী দেশগুলো ও মুসলিম বিশ্বেরও আরো কিছু করার আছে, এ ঘটনাগুলো সেদিকেই অঙ্গুলী নির্দেশ করে।’
গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে শিশু রাজনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় মুঠোফোনে নির্যাতনের ভিডিওচিত্রও ধারণ করা হয়।
রাজনের লাশ গুম করার সময় মুহিত আলম নামের একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। এ ঘটনায় রাজনের বাবা হত্যা মামলা করতে চাইলে প্রথম তিনদিন পুলিশ ও স্থানীয় দালাল চক্র মামলা করতে বাধা দেয়। পরে ইন্টারনেটে রাজন হত্যার নির্যাতনের ছবি ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। রাজনের বাবার মামলা নেয় পুলিশ। ততক্ষণে রাজনের অন্যতম নির্যাতনকারী কামরুল পালিয়ে সৌদি আরব চলে যান। পরে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় তাঁকে আটক করা হয়।
এরপর রাজন হত্যা মামলায় একে একে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এঁদের মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পাশাপাশি রাজন হত্যাকাণ্ডে মামলা দায়েরে বিলম্ব ও অন্যতম আসামিকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সহায়তা করার প্রমাণ পাওয়ায় তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এঁরা হলেন জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।
এরপর গত ১৬ আগস্ট কামরুলসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজন হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর ২৪ আগস্ট আদালত ওই অভিযোগপত্র আমলে নেন। একই সঙ্গে অভিযুক্ত তিন পলাতক আসামি কামরুল ইসলাম, তাঁর ভাই শামীম আহমদ ও পাভেলকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারিসহ তাঁদের মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত।
অভিযোগপত্রে কামরুল, তাঁর ভাই শামীম আহমদ ও পাভেলকে পলাতক দেখানো হয়। এ ছাড়া বাকি অভিযুক্তরা হচ্ছেন কামরুলের ভাই আলী হায়দার, মুহিদ আলম, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, দুলাল আহমদ, নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ ও আয়াজ আলী।