‘পানিত ভাসি যাই, কেউ হামাগোগ দেখে না’

Looks like you've blocked notifications!
কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ছবি : এনটিভি

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার আরো শতাধিক গ্রাম। বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। ত্রাণ না পেয়ে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমের কাছে।

চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার অষ্টমীরচরের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ ময়না বেগম (৫৫) রোববার এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘পানি বাড়তেই আছে। বানের পানিত ভাসি যাই। কেউ হামাগোগ দেখে না। ছোওয়া-পোওয়া নিয়া না খায়া আছি।’

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের খাসের চরের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ মাজেদ আলী বলেন, ‘বন্যায় সব শেষ হয়া গেছে। আবাদপাতি সব শেষ। কাজ নাই, খাবার নাই। খুব কষ্টে আছি। আল্লাহ কী করবে জানি না। কোনো চেয়ারম্যান মেম্বার এখন পর্যন্ত খোঁজ নেয় নাই।’

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে প্রায় ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ দিন-যাপন করছে। এর মধ্যে ৭০০ পরিবারকে আধা কেজি করে চিড়া বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারের বরাদ্দকৃত চার মেট্রিক টন চাল ৪০০ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।’

চিলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাঁর ইউনিয়নে দুই হাজার ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ‘চার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। যা বিতরণ করা হচ্ছে।’ 

দুই সপ্তাহের টানা বন্যায় জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৬টি ইউনিয়নের এক লাখ ২৫ হাজার পরিবারের প্রায় ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি খাতে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে ৬০ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, ৬০ হাজার হেক্টরের মধ্যে ৩৬ হাজার হেক্টর জমির আমনক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শওকত আলী জানান, তিনি একটি সভায় আছেন, তাই এ ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন না।

ব্রিজ, কার্লভাট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বানভাসী মানুষ উঁচু রাস্তা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। চর ও দ্বীপচরগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা না থাকায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে বানভাসী মানুষ। এসব এলাকায় দেখা দিচ্ছে নানা পানিবাহিত রোগ।

জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, বানভাসী মানুষের জন্য এ পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৫০ মেট্রিক টন চাল ও ছয় লাখ ৪৫ হাজার টাকা। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আরো বরাদ্দ চেয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ছয় সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ছাড়া নুন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান পাউবো কর্মকর্তা।