সিলেট সিটি নির্বাচন : আগেই ‘হারতে বসেছে’ বিএনপি

সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের আগেই ‘হারতে বসেছে’ বিএনপি। গত নির্বাচনে শক্তিশালী প্রার্থী ও তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে চমক দেখানো কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আরিফুল হককে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা।
কিন্তু আরিফ-অনুসারী ও সাধারণ নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের মধ্যে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও সাধারণ ভোটারের কাছে আরিফই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বর্তমান মেয়র হিসেবে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করে তিনি নগরবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
ওয়ান ইলেভেনের সময় শীর্ষ দুর্নীতিবাজের তালিকায় নাম আসা বা হত্যা মামলায় কারান্তরীণ হওয়ার বিষয় বিবেচনায় নিলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আরিফকেই এগিয়ে রাখছেন তাঁরা। তাঁরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আরিফ ছাড়া কেউ পেরে উঠবেন না। তবে দলের মধ্যে বিরোধের কারণে আটকে আছে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন।
তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই বিরোধ ওঠেছিল তুঙ্গে। স্থানীয় বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা কেন্দ্রের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন আরিফুল হকের বিরুদ্ধে। একই অভিযোগে গত সিটি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী হিসেবে আরিফকে মেনে নিলেও এবার আরিফ ছাড়া বিএনপির যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
এ ক্ষেত্রে আরিফের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন অন্তত তিন নেতা। তাঁরা হলেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকীও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। এরইমধ্যে তিনি মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের কাছে নালিশ দেওয়া হয়েছে। আর এ কারণেই লন্ডন-ঢাকা টানাপড়েনে ঝুলে গেছে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারটি।
নাসিম হোসাইন ও বদরুজ্জামান সেলিমের অভিযোগ হচ্ছে, বিএনপির সমর্থনে ২০১৩ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দলের পক্ষে কোনো কাজই করেননি আরিফ। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে দূরে থেকেছেন। দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে বিএনপিকে কোণঠাসা করেছেন। বিশেষ করে সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সখ্যতার কথা তুলে ধরে তাঁরা বলেন, চলতি মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে আরিফ আওয়ামী লীগের সুনাম বৃদ্ধিতে ব্যস্ত ছিলেন।
আরিফের বিরুদ্ধে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিএনপিপন্থী কাউন্সিলরদের কোণঠাসা করে রাখারও অভিযোগ করা হয়েছে। এ অভিযোগ করেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
মেয়রের বিদেশগমন এবং কারান্তরীণ সময়ে প্যানেল মেয়র হিসেবে কয়েস লোদী ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও কৌশলে আরিফুল হক চৌধুরী অন্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ। বিষয়টি এক সময় আদালতে গড়ালেও চেয়ার পাননি লোদী। আরিফ কারান্তরীণ থাকার সময় সরকারি কর্মকর্তা চালিয়েছেন নগরভবন। সুযোগ বুঝে কেন্দ্রের কাছে সব ক্ষোভই উগরে দিয়েছেন লোদী।
তবে বিরোধ যতই থাক, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে আরিফের বিকল্প তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। দায়িত্বশীলদের অনেকে বলছেন, যৌক্তিক কারণেই হয়তো বিরোধ আছে। তবে সবার ওপরে দলের স্বার্থেও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দীকি বলেন, বর্তমান মেয়র যিনি আছেন তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় অভিযোগ থাকলেও তিনি মাত্র আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন, এ বিষয়টিও দেখতে হবে। নানামুখী উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন। ভুল থাকলে শোধরাতে হবে। তবে হঠাৎ করে প্রার্থী মনোনয়নে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে সাধারণ ভোটারের মনোভাব বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করবে এবং সেটি আজকালের মধ্যেই হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, একই ব্যক্তি দুই দায়িত্ব পালন করতে গেলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। বর্তমান মেয়রকে গত পাঁচ বছর একই সাথে প্রশাসন এবং দলকে সামাল দিতে হয়েছে। এর মধ্যে আড়াই বছরই জেলে ছিলেন তিনি। সে ক্ষেত্রে হয়তো তাঁর অনেক ত্রুটি হয়েছে। একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো অভিযোগ নয় এটা। তবে দল চূড়ান্ত মনোনয়নের আগে জনগণের মনোভাব, জনপ্রিয়তা সবকিছুই বিবেচনায় নেবে। দলের মধ্যে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও সবাই শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তই মেনে নেবে।