শিশু মনিরা হত্যার আসামি গ্রেপ্তার, জবানবন্দি
ঝিনাইদহের চাঞ্চল্যকর শিশু মনিরা হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবু জাফরকে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাফর ঝিনাইদহের একটি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ খবর নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার অচিন্তনগর গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে শিশু মনিরা খাতুনকে (৫) গত ৭ জুলাই অপহর করা হয়। ১২ জুলাই বাড়ির পাশের একটি পাটক্ষেতে তার লাশ পাওয়া যায়। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এলাকাবাসী ফুসে উঠে। তারা মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাপের মুখে পড়ে। পাল্টে দেওয়া হয় সদর থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জেলার কোটচাঁদপুরের তালশার আইসি ক্যাম্পে বদলি করা হয়। সেই সঙ্গে আসামি গ্রেপ্তারের জন্য তাঁকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নতুন ওসি হিসেবে সদর থানায় যোগ দেন হাসান হাফিজুর রহমান।
নবাগত ওসি জানান, বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে মনিরা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহিদ সোমবার রাতে ঢাকায় অবস্থান নেন। তিনি হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবু জাফরের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর টঙ্গী থানা পুলিশের সহযোগিতায় আজ সকালে হানা দেন টঙ্গীর পোশাক কারখানার কর্মী মো. সফরের বাড়িতে। সেখান থেকে জাফরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাফর ঘটনার পর থেকে তাঁর বড় ভাই সফর আলীর বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন।
ওসি হাসান হাফিজুর রহমান জানান, আজ দুপুর ১টার দিকে জাফরকে ঝিনাইদহের বিচারিক হাকিম মো. মাসুদ আলীর আদালতে হাজির করা হয়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিনি মনিরা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাফরকে আদালতের নির্দেশে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আদালতে জাফরকে হাজির করার পর বেরিয়ে আসে মনিরা হত্যার আসল রহস্য। জাফর আদালতের কাছে হত্যার লোমহোর্ষক বর্ণনা দেন। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তিনি মুঠোফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন। গত ২৬ আগস্ট তিনি ফোনটি আবার চালু করেন। তখন পুলিশ তাঁর সঠিক অবস্থান জানতে পারে।
পুলিশ সূত্র জানায়, শিশু মনিরা হত্যায় তিনিসহ আটজন জড়িত বলে আদালতের কাছে স্বীকার করেন জাফর। আসামিরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে মনিরাকে অপহরণের পর প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে নিয়ে যায়। এর আগেই মনিরাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়। কিন্তু ঘুমের ওষুধ দেওয়ায় আর চেতনা ফেরেনি মনিরার। অচেতন শিশুটির হাত পা কেটে হত্যা করে তারা। হত্যার আলামত ধ্বংসের জন্য মনিরার লাশ এসিড ভর্তি ড্রামে ডুবিয়ে রাখে। অর্ধগলিত লাশ একটি বস্তায় ভরে নিয়ে যায় মনিরাদের বাড়ির পাশের একটি পাটক্ষেতে। সেখানে ফেলে দেওয়া হয় মনিরার গলিত লাশ।
পুলিশ জানায়, অপহরণকারীরা মনিরাকে খুন করার পরও মুঠোফোনে মুক্তিপণ হিসেবে টাকা চেয়ে আসছিল। লাশ উদ্ধারের পর মনিরার বাবা ঝিনাইদহ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মনিরার লাশ উদ্ধারের পরই লোকজন নিহতের চাচাতো ভাই হাফেজ হুজাইফা জিহাদ ও নূপুর নামের এক নারীকে আটক করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। এর পর বেশ কিছু দিন পুলিশের তৎপরতা থেমে থাকে। এতে এলাকার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করে খুনিদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানায়।
ওসি হাসান হাফিজুর রহমান জানান, মনিরা হত্যার সঙ্গে জড়িত আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য নতুন করে অভিযান চালানো হচ্ছে।