ছাত্রীনিবাসে থাকেন পুরুষ কর্মচারীরা, নারীদের অস্বস্তি

Looks like you've blocked notifications!
পঞ্চগড় জেলা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ছবি : এনটিভি

পঞ্চগড় জেলা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্রীনিবাসে বাস করছেন পুরুষ কর্মচারীরা। বিধি অনুযায়ী ছাত্রীনিবাসটি শুধু নারী প্রশিক্ষণার্থীদের জন্যই নির্ধারিত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে পুরুষ কর্মচারীরাও বসবাস করে আসছেন। এতে আতঙ্ক ও অস্বস্তির মধ্যে কাটছে এই ছাত্রীনিবাসের নারী প্রশিক্ষণার্থীদের। ছাত্রীনিবাস থেকে পুরুষ কর্মচারীদের সরিয়ে নেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের হলেও সে বিষয়ে কর্ণপাত করছে না কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৩০ ছাত্রীর ধারণক্ষমতা-সংবলিত দোতলা এই ছাত্রীনিবাসের কক্ষসংখ্যা মোট আটটি। এর মধ্যে দ্বিতীয় তলায় চারটি ও প্রথম তলায় তিনটি কক্ষ ছাত্রীদের আবাসনের জন্য। প্রথম তলার একটি কক্ষে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষেই বিভিন্ন বিষয়ে (গবাদিপশু পালন, মৎস্য চাষ, সেলাই, কম্পিউটার বেসিক প্রশিক্ষণ) অংশ নেওয়া ২৩ নারী প্রশিক্ষণার্থী গাদাগাদি করে রয়েছেন। নিচতলার তিনটি কক্ষে রয়েছেন তিনজন পুরুষ কর্মচারী। মাঝের খাবার কক্ষটিতে অতিকষ্টে রয়েছেন চারজন নারী প্রশিক্ষণার্থী। দুই পাশে পুরুষ কর্মচারী আর মাঝখানে নারীদের এভাবে বসবাস করায় সব সময়ই মনের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে বলে জানালেন নারী প্রশিক্ষণার্থীরা। এ ছাড়া অনেক সময় তাঁদের পড়তে হয় পুরুষ কর্মচারীদের অশোভন আচরণের মুখে।

সাত বছর ধরে ছাত্রীনিবাসের নিচতলার ওই তিনটি কক্ষ দখল করে রাখা কর্মচারীরা হলেন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইলেকট্রিশিয়ান মোস্তফা কামাল, কম্পিউটার অপারেটর মো. মামুন ও নৈশপ্রহরী মো. জিয়া।

ছাত্রীনিবাসে পুরুষ কর্মচারীদের থাকার প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি কম্পিউটার বেসিক প্রশিক্ষণ কোর্সের ৩৪তম ব্যাচে অংশ নেওয়া শিল্পী রানী রায় নামের এক প্রশিক্ষণার্থীকে মোবাইলে কথা বলার অপরাধ দেখিয়ে ছাত্রীনিবাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। পরে শিল্পী রানী এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদন করেছেন।

ছাত্রীনিবাসে বসবাস করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ইলেকট্রিশিয়ান মোস্তফা বলেন, ‘স্যারদের অনুমতি নিয়েই আমরা এখানে আছি। তাঁরা সমস্যা মনে করলে চলে যাব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আবাসিক নারী প্রশিক্ষণার্থী জানান, পুরুষ কর্মচারীরা একসঙ্গে অবস্থান করায় তাঁরা সব সময়ই অস্বস্তিতে থাকেন। এসব পুরুষ কর্মচারীর জন্যই ছাত্রীনিবাসের একটি কক্ষে সাত থেকে আটজন করে প্রশিক্ষণার্থীকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। তাঁরা অল্প সময়ের জন্য (তিন থেকে ছয় মাস) আসেন। এ কারণে তাঁদের অভিযোগ কাজে লাগে না বলেও অভিযোগ করেন এসব প্রশিক্ষণার্থী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর (ডিপিসি) মো. মোস্তফা কামাল জানান, ছাত্রীনিবাসে যদিও পুরুষ কর্মচারীদের থাকা উচিত নয়, তবে জায়গা না থাকায় তাঁদের সেখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চগড় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুল হোসেন ছাত্রীনিবাসে পুরুষ কর্মচারীদের বসবাসের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আসলে জায়গার অভাব আর নারী প্রশিক্ষণার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাঁদের সেখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’