খুলনায় নিহত বাবা ও মেয়ের বাসায় চুরি
খুলনায় ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা ও তাঁর বাবা ইলিয়াস হোসেন চৌধুরীর লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাতে খুলনার বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকার ৩ নম্বর সড়কে এপিভিলা নামের ওই বাড়িতে কম্পিউটারসহ বেশ কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়েছে।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে পারভীন ও তাঁর বৃদ্ধ বাবা ইলিয়াসের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত পারভীনের ভাই রেজাউল আলম জানান, ওই বাড়িতে বোন পারভীন ও বাবা ইলিয়াসই বাস করতেন।
এদিকে নিহত পারভীনের ভাই রেজাউল আলম চৌধুরী দুজনকে আসামি করে শনিবার গভীর রাতে লবণচোরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি নওয়াব আলীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নওয়াব আলী পেশায় একজন জমির দালাল।
লবণচোরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারেফ হোসেন জানান, শনিবার রাতে ওই বাসা তালাবদ্ধ ছিল। এই সুযোগে বাড়ির গ্রিল কেটে একটি কম্পিউটারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে থানা থেকে একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) পাঠানো হয়েছে। তবে এই কম্পিউটার চুরির ব্যাপারে এখনো কোনো মামলা হয়নি।
ওসি মোশারেফ জানান, শনিবার রাতে নিহতের ভাই রেজাউল আলম চৌধুরী বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন জমির দালাল নওয়াব আলী ও আসলাম মিস্ত্রি। এর মধ্যে নওয়াব আলীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
ওসি মোশারেফ হোসেন জানান, এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, তাঁর (রেজাউল) বাবা ইলিয়াস হোসেন চৌধুরী তিন বছর আগে এই জমি কেনার পর থেকে এই দুজন (নওয়াব ও আসলাম) নানাভাবে হয়রানি এবং হুমকি দিচ্ছিলেন। এজাহারে ঘটনার সময় সাতভরি স্বর্ণালংকার হারিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওসি মোশারেফ বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া নওয়াব আলী পুলিশের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাবে না।’ মোশারেফ আরো বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলার জট পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
খুলনা এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. ইউনুস আলী জানিয়েছেন, পারভীন সুলতানা ২০১৩ সালে ২৭ অক্টোবর এই শাখায় যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে পারভীনের সঙ্গে সব কর্মকর্তাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। গ্রাহক বা কেউই পারভীনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। তিনি আরো বলেন, ‘বাড়িটি দুর্গম এলাকায় হওয়ার কারণে পারভীন ব্যাংক ছুটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চলে যেতেন। তিনি জানান, পারভীনের বাবাও মাঝেমধ্যে তাঁকে (পারভীন) নিতে ব্যাংকে আসতেন।
নিহত পারভীন সুলতানাদের বাড়িটি পরিদর্শন শেষে পুলিশের একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কারণে বাড়িতে উঁচু দেওয়াল দিয়ে দুর্গের মতো করা হয়েছিল। সেটিই তাঁদের কাল হয়েছে। কারণ এই বাড়ির ভেতর কী হচ্ছে তার কোনো দৃশ্য বা শব্দ বাইরে আসে না।
গল্লামারী এলাকার বাসিন্দা এক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, ১০ বছর আগেই এই এলাকাতে ধান চাষ হতো এবং তখন এলাকাটি ছিল বটিয়াঘাটা থানার ভেতরে। বর্তমানে এলাকায় নতুন বসতি স্থাপন করা হয়েছে এবং খুলনা সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হয়েছে। তবে এলাকার অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অপরাধীদের আশ্রয় স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।