থানচির রেমাক্রী খালে পর্যটক নিখোঁজ
বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রী খাল পাড়ি দিতে গিয়ে আরিফুল হাসান ফাহিম (২৫) নামের ঢাকার এক পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন। আজ বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
নিখোঁজ আরিফুল হাসান ঢাকার মিরপুরের হেদায়েত উল্ল্যাহর ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে আর্কিটেকচারের ওপর পড়াশুনা করে চাকরি করতেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আজ সকাল ৯টার দিকে থানচি উপজেলা সদর থেকে আরিফুল হাসান ফাহিমসহ ঢাকার ছয়জন পর্যটক দর্শনীয় পর্যটন স্পট রেমাক্রী ভ্রমণে যান। সফরসঙ্গী অন্যরা হলেন-ঢাকার মহাখালীর আবুল হাসনাত, বাড্ডা এলাকার নিশাত পারভেজ ও শামছুল করিম, খিলগাঁও এলাকার মো. আশফাক রাকিব হাসান ও বাসাবো এলাকার ফাহাদ বিন তৌহিদ। রেমাক্রী থেকে নাফাখুম জলপ্রপাতের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। ওই জলপ্রপাতে যেতে সাত-আটবার পাথুরে রেমাক্রী খাল হেঁটে পার হতে হয়। ঘূর্ণিঝড় তিতলির কারণে ওই এলাকায় গত কিছুদিন টানা বৃষ্টি হয়। এ কারণে রেমাক্রী খাল ও সাঙ্গু নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। বিপজ্জনক পরিস্থিতি থাকায় কিছুদিন সেখানে পর্যটকদের যেতে দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। পানি কিছুটা কমার পর গতকাল থেকে পর্যটকদের রেমাক্রী পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি দেয় প্রশাসন।
নিয়ম অনুযায়ী বান্দরবানের থানচি থানায় নাম-ঠিকানা লেখার করার পর ছয়জন পর্যটক ও গাইডের (ডানে) ছবি তুলে রাখে পুলিশ। এই ছয়জন পর্যটকের মধ্যে আরিফুল হাসান ফাহিম (বাঁ থেকে তৃতীয়) আজ রেমাক্রী খাল পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। ছবি : থানা থেকে নেওয়া
আজ রেমাক্রী থেকে হেঁটে হেঁটে নাফাখুম যাওয়ার সময় সাইগংওয়া ইয়াং নামের স্থানে পা পিছলে রেমাক্রী খালে পড়ে পানির স্রোতে ভেসে যান পর্যটক আরিফুল হাসান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
থানচির স্থানীয় সাংবাদিক অনুপম মারমা জানান, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে থানচি উপজেলার দর্শনীয় স্থান নাফাখুম, আমিয়াখুম, সাতভাইখুম, বড়পাথর, রেমাক্রী খালসহ পর্যটন স্পটগুলো। যে কারণে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে পর্যটকদের রেমাক্রীর বাইরে অন্য কোথাও ভ্রমণে নিষেধ করা হয়। স্থানীয় গাইডদের পক্ষ থেকে রেমাক্রী খাল পারাপারের স্থানে রশি টেনে দেওয়ার কথাছিল। কিন্তু গাইড ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নিষেধ না মেনে নাফাখুম যাওয়ার পথে ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক স্থানটি পার হওয়ার সময় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রী যাওয়ার আগে থানায় জমা দেওয়া পর্যটকদের নাম-ঠিকানা। ছবি : এনটিভি
ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ১৫০-২০০ জন পর্যটক নিয়মিত নাফাখুম ভ্রমণে যাচ্ছে বলে জানান অনুপম মারমা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুচ সাত্তার জানান, ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ছয়জন পর্যটক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে স্থানীয় গাইডের মাধ্যমে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চরে রেমাক্রী যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় সেখান থেকেই তাদের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে নাফাখুম যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। পা পিছলে পানিতে ডুবে গিয়ে আরিফুল হাসান নামের একজন পর্যটক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। অন্যরা হালকা আঘাত পেলেও সুস্থ আছেন।
থানচি বলিপাড়া বিজিবি ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাবিবুল হাসান জানান, নিখোঁজ পর্যটকের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। রেমাক্রী খালে পানির স্রোত অনেক বেশি। স্রোতে ভেসে কোথায় আটকে আছেন, সেটি খুঁজে দেখা হচ্ছে।