ডিসির মাধ্যমে নবজাতক ইরা পেল নতুন পরিবার

Looks like you've blocked notifications!
নড়াইলে নিঃসন্তান ইভান-সাহিনা দম্পতির কাছে নবজাতক ইরাকে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা। ছবি : এনটিভি

নড়াইলের মানসিক প্রতিবন্ধী সীমার (২২) পিতৃপরিচয়হীন নবজাতক কন্যাকে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মধ্যস্থতায় দত্তক নিয়েছেন এক নিঃসন্তান দম্পতি।

গতকাল রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসকের  হলরুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিঃসন্তান ইভান-সাহিনা দম্পতির কাছে ওই শিশুকে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা। ডা. নূর আলীর ছেলে সৈয়দ ইভান আলীর বাড়ি সদর উপজেলার রামসিদ্দি এলাকায়।

শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ‘ইরা’। এরই মধ্যে ওর ব্যাংকে এক লাখ টাকার একটি স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করা হয়েছে বলেও অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেওয়া হয়। 

শিশুটিকে দত্তক পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ইভান ও সাহিনা বলেন, তাঁরা শিশুটিকে পেয়ে অত্যন্ত খুশি। যথাযথ আদর-স্নেহ দিয়েই ওকে বড় করে তোলা হবে। এ জন্য সবার কাছে দোয়া চান তাঁরা।

শিশু হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট  মো.  সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুর রশীদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি) মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. বাকাহিদ হোসেন, রতন কুমার হালদার, জেলা শিশু কর্মকর্তা মো. ওলিয়ার রহমান, জেল সুপার মজিবুর রহমান মজুমদার, প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিক, জেলা সাংবাদিক ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান জামী প্রমুখ ।

গত ১০ জানুয়ারি সকালে সদর উপজেলার হাতিয়াড়া গ্রামে একটি পুকুরপাড়ে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন মানসিক প্রতিবন্ধী সীমা। সে সময় তাঁকে দেখতে পান গ্রামের সুকান্ত গোস্বামী, প্রলয় সিকদার ও ইউপি সদস্য অসীম পাল।

পরে এক নারীর সহায়তায় ইজিবাইকে করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সীমাকে। পরে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হলে তিনি নিজ উদ্যোগে সীমার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। দুপুরের দিকে সীমার গর্ভে একটি কন্যাশিশু জন্মলাভ করে।

এদিকে মানসিক প্রতিবন্ধী ও সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়া সন্তানের মা হওয়ায় সীমার পরিবার বা আত্মীয়পক্ষের কেউ হাসপাতালে যাননি। ফলে ডিসিই তাঁর দায়িত্ব নেন। মা ও নবজাতকের নিরাপত্তায় দুই নারী পুলিশ শম্পা ও সুমাইয়াকে নিযুক্ত করা হয়।

সে সময় জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘ডিডি সমাজসেবা, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সীমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নবজাতকের পিতৃপরিচয় পাওয়া যায়নি। যদি সীমার কোনো আত্মীয় নবজাতকের দায়িত্ব নেন ভালো। তা না হলে আইনগতভাবে কেউ যদি শিশুটিকে দত্তক নিতে চায়, তাহলে সেটা বিবেচনা করা হবে। ইতোমধ্যে দত্তক নেওয়ার জন্য ১১ জন আবেদনও করেছেন।’

সীমার আত্মীয়রা কেউ দায়িত্ব নিতে এগিয়ে না আসায় পরে শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহী দম্পতিদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। শেষমেশ যাচাই-বাছাই শেষে নিঃসন্তান ইভান-সাহিনা দম্পতির কাছে শিশুটি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সীমার মামাবাড়ি জেলার হাতিয়াড়া ইউনিয়নে। শিশু অবস্থায় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সীমার মা মারা যান। এরপর হাতিয়াড়া গ্রামে মামা বিনয় বৈরাগীর বাড়িতে লালিতপালিত হন সীমা। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। সম্প্রতি সন্তান জন্ম দেওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় সীমার মামা বিনয় বৈরাগী জানান, তাঁরা সীমাকে চেনেন না।