সিইসি কায়দা করে জানিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি : ড. কামাল
আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার সংস্কৃতি রোধে ইভিএম ব্যবহার প্রয়োজন- প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এমন বক্তব্যের মাধ্যমে স্বীকার করে নিয়েছেন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে।
এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ঐক্যফ্রন্টের বাকি সাতজন সাংসদ শপথ নেবেন কিনা তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তবে তিনি চান সবাই ইতিবাচকভাবে সিদ্ধান্ত নিক।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে দিনভর বৈঠক চলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের। দেশের সার্বিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এতে। বৈঠক শেষে ইভিএম ব্যবহারের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সিইসির বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় ড. কামালের।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘উনি কায়দা করে জানাচ্ছেন যে হয় না, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই। বোঝার ক্ষমতা যাদের আছে, তারা বুঝেছে যে উনি খুব দুঃখ করে বলছেন যে আগের রাতে যেন না হয়। এর অর্থ হলো যে আগের রাতে যে হয়েছে এটাকে উনি অবশ্যই কিছুটা স্বীকার করছেন। আর স্বীকার করে বলছেন, আগের রাতে যেন না হয়, সেই কারণে ইভিএম ভবিষ্যতে ব্যবহার করা হোক। তো, উনাকে আমি ধন্যবাদ জানাই, উনি কায়দা করে একটা উচিত কথা বলার চেষ্টা করে থাকেন।’
দল ও জোটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের শপথ নেওয়া অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেন ড. কামাল হোসেন। তবে গণফোরামের মোকাব্বির খানসহ ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতরা শপথ নেবেন না এমন অনড় অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিতও দেন ড. কামাল।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, ‘উনাকে নিয়েই সিদ্ধান্ত নেব আমরা। নেওয়ার ব্যাপারে উনার ভূমিকার থাকবে। সিদ্ধান্ত তো যখন সাপেক্ষ, নিতেও পারেন, নাও পারেন দুইটাই হতে পারে।’
ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সাতজন এমপির শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও অনড় আছে কি না জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা আলাপ করব, আমরা উনাদের নিয়ে বসব। ইতিবাচকভাবে তারা সিদ্ধান্ত নেন, আমরা চাই। উনাদেরও তো কথাবার্তা শুনতে হবে। আমি এককভাবে এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না। ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত ঐক্যফ্রন্টে নেওয়া হবে।’
ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন ড. কামাল হোসেন।
গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে
৩০ ডিসেম্বরের ‘কলঙ্কিত ও তথাকথিত’ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। শনিবার গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সভায় তিনি এ কথা বলেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ড. কামাল বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন কায়েম ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় ও জোরদার করতে হবে। জনগণ বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সচেষ্ট। এ লক্ষ্যে আমাদের কাজ করে যেতে হবে’, যোগ করেন তিনি।
সভায় দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের জন্য আগামী ২৭ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করার পাশাপাশি সভাপতি পরিষদ সদস্যদের নেতৃত্বে কাউন্সিলের আগেই জেলা সম্মেলন ও সফরসূচি সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অন্যদের মধ্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মফিজুল ইসলাম খান কামাল, অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন, মোকাব্বির খান, অ্যাডভোকেট শান্তিপদ ঘোষ, অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইন, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, আ ও ম শফিক উল্লাহ, মোশতাক আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১২ জানুয়ারি চলতি বছরের ২৩-২৪ মার্চ কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছিল দলটি।