রাতে ভোটের অভিযোগ, রাঙামাটিতে একাধিক প্রার্থীর বর্জন
রাতে ব্যালটে সিল, নির্বাচনে অনিয়ম, জাল ভোট, এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় ভোট বর্জনের পর এবার নানিয়ারচর ও কাউখালী উপজেলায়ও ভোট বর্জন করেছেন একাধিক প্রার্থী।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নানিয়ারচরে তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ভাইস চেয়ারম্যান পদের সাত প্রার্থী ভোট বর্জন করে নির্বাচন স্থগিতের আবেদন করেছেন।
সেইসঙ্গে দুপুর ১২টার দিকে কাউখালী উপজেলায় নির্বাচন বর্জন করে সরে দাঁড়িয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী অর্জুন মনি চাকমা।
এর আগে ভোট জালিয়াতি, রাতে ভোট গ্রহণ ও দিনে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী হতে না দেওয়ার অভিযোগ এনে সকাল ১০টার দিকে বাঘাইছড়িতে চেয়ারম্যান প্রার্থী বড়ঋষি চাকমাসহ তিন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন। তিন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন সুমিতা চাকমা, সমীরণ চাকমা ও অমর শান্তি চাকমা।
নানিয়ারচরের চেয়ারম্যান প্রার্থী রূপম দেওয়ান অভিযোগ করেছেন, ‘রাতেই বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে গেছে এবং দিনের বেলায় আমরা ও আমাদের ভোটাররা কেন্দ্রেই যেতে পারছি না। সংগত কারণেই নির্বাচনে থাকার কোনো মানে নেই। তাই আমিসহ তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং চার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করে নির্বাচন থেকে সরে গেলাম।’
রূপম দেওয়ান আরো জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী জোন্তিনা চাকমা, পঞ্চানন চাকমাও নির্বাচন বর্জন করেছেন। ভোট বর্জনকারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন রন বিকাশ চাকমা, সুজিত তালুকদার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোয়ালিটি চাকমা ও কণিকা চাকমা।
নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসউদ পারভেজ মজুমদার বলেছেন, ‘তিন চেয়ারম্যান ও চার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন স্থগিত করার জন্য আমার কাছে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন। বিষয়টি আমি রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েছি।’
রাঙামাটির রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শফি কামাল বিষয়টি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন।
নানিয়ারচর উপজেলায় পাঁচ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে রূপম দেওয়ান ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা দুজনই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) প্রার্থী হিসেবে প্রচার ও দাবি করে আসছিলেন। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে অন্য বড় দলগুলোর কোনো প্রার্থী নেই।
এদিকে কাউখালী উপজেলায় নির্বাচন বর্জন করে সরে দাঁড়িয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী অর্জুন মনি চাকমা। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সামশু দোহা চৌধুরীর সমর্থকরা ব্যাপক জাল ভোট দিয়ে নির্বাচনের সব শৃঙ্খলা ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তিনি অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান।
অর্জুন মনি চাকমা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর কাউখালী উপজেলায় নৌকার প্রার্থী ছাড়া আর কোনো প্রার্থী নেই।
এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শতরূপা তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হচ্ছে এবং কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক ভোটার উপস্থিত হয়েছেন। তবুও তিনি কেন অভিযোগ করে সরে গেলেন, বুঝতে পারছি না।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভোট বর্জন
বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চার প্রার্থী সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমিতা চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সমীরণ চাকমা ও অমর শান্তি চাকমা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত রাতে অন্তত চারটি কেন্দ্রে অবৈধভাবে ব্যালট বাক্সে ব্যাপক ব্যালট পেপার ভর্তি, আজ ভোট গ্রহণের সময় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়াসহ ভোটকেন্দ্র দখল করে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে ভোট বর্জনের ঘোষণা করছি।’ একই সঙ্গে ওই উপজেলায় পুনর্নির্বাচনের দাবিও করেন তাঁরা।