কুড়িগ্রামে নদীভাঙন, শতাধিক পরিবার গৃহহীন
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/10/21/photo-1445435525.jpg)
দুধকুমার নদের ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নে শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে কয়েকশ মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। নদের বাঁধের পাশে আরো শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এ নিয়ে এই এলাকার মানুষ কয়েক দিনে দুবার ভাঙনের শিকার হলো। তাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। আগে যারা ভাঙনের কবলে পড়েছে তারা ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে এখন আর কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। তাই আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে না নতুন করে ভাঙনে নিঃস্বরা।
ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব আইয়ুব আলী জানান, দুই বছর ধরে এই ইউনিয়নের ভৈষেরকুটি, খামার, রসুলপুর ও ব্রহ্মত্তর গ্রামে দুধকুমারের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে মেইন ল্যান্ডের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শত শত একর আবাদি জমি ও বসতবাড়ি নদী গ্রাস করে নিয়েছে। মাঝখানে কিছুদিন ভাঙনের তীব্রতা কমলেও গত এক মাস থেকে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ভাঙন রোধে সরকারের পদক্ষেপের দাবিতে মানববন্ধন, বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফল না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন ভাঙনকবলিতরা।
ভাঙনকবলিতদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, দুই বছর ধরে এই এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টরা যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে ভাঙন হলে হৈ চৈ শুরু হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। অস্থায়ী নয় স্থায়ী কাজ চান তাঁরা। এই এলাকায় উত্তরে স্লুইচগেট থেকে দক্ষিণে আইয়ুবের বাড়ি পর্যন্ত তাঁরা ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।
ঘোগাদহ ইউপির সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তবিজন বিবি জানালেন, দুধকুমার নদী বর্তমানে ঘোগাদহ ইউপি প্রতিরক্ষা বাঁধ থেকে মাত্র ২০ ফুট কাছে চলে এসেছে। বাঁধের পাশে শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। আবুল হোসেন, মতিয়ার, মান্নান, নুরু, আব্দুল করিম, বাবলু, ভানু মুন্সী, কাশেম, নুর হোসেন, বাংটু, বানভাসা, বাহের উদ্দিন, কাজু, নজরুল, বারেক চকিদার, ছালাম, আবু কালাম, হারুন, কাশেম, আজিজুল, তাইজুল, আমিনুল, জোবে, ফজেল, তাইজুল ও আজিজুলসহ মাঝিপাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার পর্যায়ক্রমে বসতবাড়ি সরানোর কাজ করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। এ কারণে এরা পাশের গ্রামের মাতবরদের ধরেও আশ্রয়ের জায়গা পাচ্ছে না।
এই গ্রামের শাহের আলী (৫৫) বলেন, ‘হামরা সগাই কামলা দিয়া সংসার চালাই। শেষ সম্বল জায়গাও নদী খায়া ফেলাইবার নাগছে। হামরা কোটে যামো। ছওয়া-পওয়াক নিয়া কী করমো। হামারগুলাক দেখপের কি কাঁইয়ো নাই।’
ঘোগাদহ ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল মালেক জানান, বিগত দুই বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে এই জায়গায় ৫০০ মিটারের বেশি ভাঙন অব্যাহত আছে। বর্তমানে ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে ওয়াপদা বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
আবদুল মালেক বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প আকারে কাজ হাতে নিচ্ছে বলে জেনেছি। তবে তা এই ভাঙন ঠেকাতে এক বালতি পানির মধ্যে এক মুঠো বালু ফেলার মতো অবস্থা হবে। এখানকার জনপদ বাঁচাতে ব্যাপক হারে কাজ হাতে নেওয়া দরকার।’
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘জরুরি কাজের আওতায় ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও টেক্সটাইল ও জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে ১৫ লাখ টাকার বরাদ্দ ধরা হয়েছে। খুব দ্রুত ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে।’