বান্দরবানে অপহৃত আ.লীগ নেতার খোঁজ মেলেনি
বান্দরবানে অপহরণের শিকার পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চথোই মং মারমার (৫৩) সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁর মুক্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিটাম দিয়েছেন তারা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের উজিপাড়া খামার বাড়ি থেকে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা চথোই মং মারমাকে অস্ত্র দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। চথোই মং মারমা বান্দরবান পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন।
চথোই মং মারমাকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সম্ভাব্য স্থানগুলোতে অভিযানে নেমেছে। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে অপহৃত আওয়ামী লীগ নেতার মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার সকালেও শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চের সামনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাজল কান্তি দাশ, সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী, সহসভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর, মংক্যচিং চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক লক্ষ্মী পদ দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক অজিত দাশ প্রমুখ।
সমাবেশে যুগ্ম সম্পাদক লক্ষ্মী পদ দাস বলেন, পার্বত্যবাসীর শান্তির লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করা হয়েছিল। বন্দুকের নলে ক্ষমতার অপ্রয়োগের জন্য নয়। জেএসএস প্রধান সন্তু লারমাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে বসে লাল সবুজের পতাকাকে রক্তাক্ত করবেন, এটি মেনে যায় না। আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ায় জনসংহতি সমিতি প্রতিশোধমূলকভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অপহরণ-হত্যা করছে। শান্তিপ্রিয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা বান্দরবান অশান্ত করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী বলেছেন, অপহৃত আওয়ামী লীগের নেতা চথোই মং মারমাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিন। এর আগে ২০১৬ সালের জুন মাসে অপহৃত সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মংফু মারমা কোথায় আছেন, সেই তথ্যও আমাদের দিন। চলতি মাসে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সবকিছুর মাসুল কিন্তু আপনাদের দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাস বলেন, ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবেন না, সীমা লঙ্ঘনকারীদের সৃষ্টিকর্তাও পছন্দ করেন না। আওয়ামী লীগ ধৈর্য ধারণ করতে জানে, আওয়ামী লীগ সীমা লঙ্ঘনকারীদের দাঁতভাঙা জবাবও দিতে জানে। সেটি ভুলে যাবেন না।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, অস্ত্রের মুখে অপহৃত আওয়ামী লীগ নেতার সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। অপহরণের ঘটনায় সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। অপহৃতকে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে চলতি মাসে বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের তাইংখালী বাজারে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সহযোগী সংগঠন যুব পরিষদের সদস্য বিনয় তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫) খুন হন। ওই দিন রাতে রাবার বাগানের শৈলতনপাড়া থেকে যুব পরিষদের আরেক কর্মী পুরাধন তঞ্চঙ্গ্যাকে (৩২) অপহরণ করা হয়। পরের দিন জেএসএস কর্মী ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে বাবা জয়মনি তঞ্চঙ্গ্যাকে (৫২) গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এক দিন পর আওয়ামী লীগের কর্মী ক্যচিং থোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের পৌরশাখা কমিটির সহসভাপতি চথোই মং মারমাকে অপহরণ করা হয়েছে।