ছিটমহলের বাসিন্দাদের অর্থনীতির মূলধারায় যুক্ত করা হবে : গভর্নর

Looks like you've blocked notifications!
আজ রোববার পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সদ্য বিলুপ্ত দহলা খাগড়াবাড়ী ছিটমহলে ব্যাংকিং খাতের সিএসআর কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ছবি : এনটিভি

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, দেশের মানচিত্রে সদ্য অন্তর্ভুক্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের অর্থনীতির মূলধারায় যুক্ত করা হবে। তাদের সম্ভাবনাময় উদ্যোগগুলোকে বিকশিত করতে সাহায্য করা হবে। এ জন্য দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আজ রোববার পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সদ্য বিলুপ্ত দহলা খাগড়াবাড়ি ছিটমহলে সিএসআর কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কেবল উচ্চ প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট নয়। বরং প্রবৃদ্ধি যেন দরিদ্রবান্ধব ও টেকসই হয় এবং এর সুফল যেন সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক তার বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের দারিদ্র্য নিরসনে ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় আনার কৌশল হিসেবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমকে গ্রহণ করেছে। আমরা এমন কোনো মানুষ বাংলাদেশে দেখতে চাই না, যার সঙ্গে আমাদের আর্থিক খাতের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।  

গভর্নর বলেন, কৃষি এসএমইসহ উৎপাদনমুখী ও পরিবেশবান্ধব খাতগুলোতে ঋণের জোগান বাড়ানো হবে। ছিটমহলের কৃষক ও হতদরিদ্রদের ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দেওয়া, বর্গাচাষিদের জন্য বিশেষ ঋণ, আমদানিনির্ভর ফসল চাষে কম সুদে ঋণ, নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে কমসুদে ঋণের সুযোগ সৃষ্টি এবং দ্রুত ও কম খরচে টাকা পাঠানোর জন্য মোবাইল ব্যাংকিং প্রবর্তন করা হয়েছে।  

গভর্নর বলেন, বর্তমান সরকারের রূপকল্প, ২০২১ সামনে রেখে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যাংকিং খাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র্য নিরসনে ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় এনে অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমকে বেগবান করার উদ্যোগ নেওয়া  হয়েছে। এ জন্য একটি স্থিতিশীল আর্থিক খাত গড়ে তুলতে ব্যাংকিংসেবায় মানবিক ধারণা প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসাম্য, বঞ্চনা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্টি অভিঘাত হ্রাসকরণের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রমকে মূল ব্যাংকিং ধারার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রংপুর শাখার মহাব্যবস্থাপক খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে সভায় দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসনাৎ জামান চৌধুরী জজ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম ও বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা বক্তৃতা করেন।  

এর আগে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কর্মসূচির আওতায় দেশের ৪৫টি ব্যাংক ওই এলাকায় ৩৩৪টি নলকূপ, ১৯২টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন, ১০টি স্প্রে মেশিন, বিপুল পরিমাণ ওষুধ বিতরণ করেন গভর্নর। আর শিক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়নে ১৯টি কম্পিউটার, এক হাজার ৩০০টি স্কুলব্যাগ, ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, ১০০টি স্কুল বেঞ্চ বিতরণ করা হয়। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ৯০টি সেলাই মেশিন, ১৮৩টি বাইসাইকেল, ১১০টি ভ্যানগাড়ি, ১৪৬ বান্ডিল ঢেউটিন, ৩০টি গরু ও দরিদ্র মানুষের শীত নিবারণের জন্য পাঁচ হাজার ১০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো ওই এলাকায় সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কালভার্ট নির্মাণসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।

গভর্নর সিএসআর কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে দহলা খাগড়াবাড়ী ছিটমহলে স্থাপিত দিনব্যাপী ব্যাংক মেলার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।