মৌলভীবাজারে আবিদা হত্যায় তানভীরের ১০ দিনের রিমান্ড
মৌলভীবাজারে অ্যাডভোকেট আবিদা সুলতানা (৩২) হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি মসজিদের ইমাম তানভীর আলমের ১০ দিন, তানভীরের স্ত্রী হালিমা সাদিয়া, ভাই আফসার আলম ও মা নেহার বেগমের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বড়লেখার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাশ কুমার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড প্রার্থনা করে পুলিশ।
ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সোমবার রাতে পৈত্রিক বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে আইনজীবী আবিদা সুলতানাকে দাফন করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিহতের স্বামী শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে বড়লেখা থানায় মামলা করেন।
মামলার আসামি করা হয়েছে আবিদা সুলতানাদের বাড়িতে ভাড়া থাকা স্থানীয় মসজিদের ইমাম তানভীর আলম, তাঁর স্ত্রী হালিমা সাদিয়া, ভাই আফসার আলম ও মা নেহার বেগমকে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে এ মামলায় আসামি করা হয় বলে মুঠোফোনে জানিয়েছেন বড়লেখা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসিম উদ্দিন।
নিহত আবিদা বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের মাধবগুল গ্রামের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের মেয়ে। তাঁর স্বামী শরীফুল ইসলাম একটি ওষুধ কোম্পানির মৌলভীবাজার জেলা বিপণন প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আবিদা-শরীফুল দম্পতি মৌলভীবাজারে শহরে থাকতেন।
আবিদার আত্মীয় শিমুল চৌধুরী জানান, মৃত আব্দুল কাইয়ুমের তিন মেয়ের মধ্যে আবিদা বড়। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আব্দুল কাইয়ুমের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী দ্বিতীয় মেয়ের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে থাকেন। আবিদা মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
আবিদার পৈতৃক বাড়িতে কেউ না থাকায় খালি বাড়িটিতে ভাড়াটিয়া হিসেবে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আমানদি গ্রামের তানভীর আহমদ স্ত্রী ও মাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন।
গত রোববার আবিদা বিয়ানীবাজারে বোনের বাড়িতে থেকে মৌলভীবাজার যাওয়ার পথে জরুরি প্রয়োজনে বাবার বাড়িতে যান। বিকেল ৪টার দিকে আবিদার বোন তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাচ্ছিলেন না।
পরে আবিদার বোনেরা তাঁকে খুঁজতে বাবার বাড়িতে আসেন। বাড়িতে এসে তাঁরা আবিদাকে পাননি। এ সময় বাড়ির একটি কক্ষে তালা দেখতে পেয়ে তাঁদের সন্দেহ হয়। পরে তাঁরা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে মেঝেতে আবিদার লাশ পড়ে থাকতে দেখে।
নিহত আবিদার বোনের স্বামী মারুফ আহমদ জানান, সকালের দিকে অ্যাডভোকেট আবিদা সুলতানা তাঁদের বাসা থেকে মৌলভীবাজারে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েন। বিকেলে আবিদাকে ফোনে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হন তাঁরা। পরে আবিদার লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পর ভাড়াটিয়া তানভীর আলম পালিয়ে যান। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুনা এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে।
রোববার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যার যেকোনো সময় আবিদা সুলতানাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কে বা কারা কী কারণে তাঁকে খুন করেছে তা এখনো জানা যায়নি। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), বড়লেখা থানা পুলিশ ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা ওই খুনের নেপথ্যের কারণ ও খুনি শনাক্ত করতে তৎপর রয়েছেন।
এদিকে আইনজীবী আবিদা সুলতানা খুনের ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যসহ জেলার সর্বস্তরের মানুষ তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা সরব রয়েছে। এই খুনের রহস্য উদঘাটনসহ প্রকৃত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছে।