তিন সংগঠনের বিক্ষোভ

রাঙামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিতের দাবি

Looks like you've blocked notifications!
শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবিতে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তিন সংগঠন। ছবি : এনটিভি

পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবিতে রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহযোগী তিন সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি আজ মঙ্গলবার সকালে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বনরূপা ঘুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ছাড়া যদি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয় তাহলে সরকারকে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, পার্বত্য চুক্তির আলোকে পার্বত্য অঞ্চলে কোনো ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম করার আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা থাকলেও আলোচনা না করে যদি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পর্যটনের নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয় তাহলে হরতাল-অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচি দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে অচল করে দেওয়া হবে।

নেতারা আরো বলেন, জনমতের বিপরীতে গত ১০ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করতে গিয়ে রাঙামাটিতে মারাত্মক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। জনমতকে উপেক্ষা করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রহরায় জোর করে কথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হলে তার ফল কখনোই শুভ হবে না। এমন অবস্থায় সরকার যদি রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো কার্যক্রম প্রতিরোধ করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে পেশিশক্তির জোরে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আগুন জ্বলবে এবং তার জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কাজ অচিরেই স্থগিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ, দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য জোরালো উদ্যোগ নিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য উদয়ন ত্রিপুরা বলেন, ‘পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জোরালো আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার হীন উদ্দেশ্যে রাঙামাটি কলেজের উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনসংহতি সমিতি ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কর্মীদের বিরুদ্ধে গণহারে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়েছে। হামলা-মামলা করে জুম্ম জনগণের আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না, বরং আরো জোরদার হবে।’  

গত শিক্ষা বর্ষ থেকেই রাঙামাটিতে চালু হয়েছে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ, যেখানে দুটি ব্যাচ এরই মধ্যে ভর্তি হয় ক্লাস করছে। অন্যদিকে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ব্যাচ ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরুর প্রতীক্ষায় আছে, এই নভেম্বরেই ক্লাস শুরুর কথা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটির কার্যক্রমের বিরোধিতা করে আসছে। সংগঠনের দাবি, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান দুটির সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এই দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অনিল মারমার সভাপতিত্বে সমাবেশে জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সম্পাদক সজীব চাকমা, স্টাফ সদস্য উদয়ন ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সভাপতি জড়িতা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা, হিল উইমেন ফেডারেশনের সভাপতি চঞ্চনা চাকমাসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।