টিআইবির প্রতিবেদনে কিঞ্চিৎমাত্র এসেছে : বিএনপি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সংসদ অধিবেশন সংক্রান্ত প্রতিবেদন ‘পার্লামেন্ট ওয়াচে’ পুরো পরিস্থিতির ‘কিঞ্চিৎমাত্র’ এসেছে বলে মনে করে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলটির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল বিতর্কিত উল্লেখ করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, নির্বাচনের পর পরই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মিত্ররাও এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন। টিআইবি দায়িত্ব নিয়েই সে কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
‘বর্তমান জাতীয় সংসদ নিয়ে টিআইবি যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে তা কিঞ্চিতই মাত্র। তবে আমরা মনে করি, সংসদে ফেক অপজিশন নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলার কারণে- দেশে সুশাসন নেই, জবাবদিহিতাও নেই। আর সে কারণে সরকারি দলের লোকেরা দেশে নৈরাজ্য বিস্তার করছে এবং তাদের লাগাম টানার শক্তি সরকার ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে।’
আসাদুজ্জামান রিপন আরো বলেন, সরকারি দলের নেতারা টিআইবির পর্যবেক্ষণকে সমালোচনা করলেও চ্যালেঞ্জ করতে পারেননি এবং বলতেও পারেননি যে, টিআইবি অসত্য পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। বরং টিআইবি এ সংসদ নিয়ে সত্য উন্মোচন করায় তাদের বিরোধী দলের এজেন্ট পর্যন্ত বলে অসৌজন্য মন্তব্য করেছেন।’
বিএনপি মনে করে, সরকারের উচিত হবে প্রকৃত বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া এবং দশম জাতীয় সংসদ ও তার নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশের পর্যবেক্ষণগুলো মেনে নিয়ে সেই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খোঁজা। এ জন্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সবার মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেওয়া এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছুতে সব বিরোধীদল ও বিশিষ্ট নাগরিক সমাজের সঙ্গে একটি সংলাপ প্রক্রিয়া সূচনা করা উচিত।
গত ২৫ অক্টোবর টিআইবি সংসদ অধিবেশন সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে সংসদের বিরোধী দলকে ‘তথাকথিত’ উল্লেখ করার পাশাপাশি বর্তমান সংসদকে ‘পুতুলনাচের নাট্যশালা’ বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে
একটি কার্যকর সংসদ পেতে সবার অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি।
পরের দিন ২৬ অক্টোবর টিআইবির প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে- এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার টিআইবিকে কে দিয়েছে? টিআইবি নিজেরাই নাচের পুতুল।
একই দিন টিআইবি প্রতিবেদন এবং দেশে আইএসের জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের অভিযোগ একই সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি বলেন, এগুলো সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ।
এ অবস্থার মধ্যেই আজ বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদে যে প্রক্রিয়ায় একটি ফেক বিরোধী দল সৃষ্টি করা হয়েছে তা সংসদীয় রাজনীতির জন্য একটি বাজে নজির হয়ে থাকবে। এই ফেক অপজিশন (ভূয়া বিরোধী দল) রেখে বর্তমান জাতীয় সংসদকে পাঁচ বছর পর্যন্ত টেনে নেওয়ার সংকল্প আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ বলে গণ্য হবে না। কারণ এই তথাকথিত বিরোধী দলকে যতই সুবিধা দিয়ে রিষ্ট-পুষ্ট করা হোক না কেন তারা দেশ-বিদেশে প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে কোনোদিনই স্বীকৃতি পাবে না। সংসদের এই কথিত বিরোধী দল আত্মপরিচয়ের সংকটে শুরু থেকেই নিমজ্জিত। সরকারের জন্য তা এখন ক্রমেই বড় মাপের বোঝা হয়ে উঠেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের মুক্তির দাবি জানানো হয়।