ছয় আঘাতেই মৃত্যু হয় রিফাতের : চিকিৎসক
ধারালো অস্ত্রের ছয়টি আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে বরগুনার নেয়াজ রিফাত শরিফের (২৫) মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক।
ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জামিল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, রিফাতের গলায়, মাথায়, বুকে ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আঘাতগুলোর মধ্যে গলায়, মাথায় ও বুকে তিনটি গুরুতর জখম রয়েছে, বাকি তিন-চারটি আঘাতের চিহ্ন ততটা গুরুতর নয়।’
ডা. জামিল আরো বলেন, বিশেষ করে গলার আঘাতের কারণে শরীরের বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ রগ কেটে গেছে। এর ফলে এতটাই রক্তক্ষরণ হয়েছে, যা সময়ের ব্যবধানে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বিস্তারিত বিষয়গুলো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই নিশ্চিত করে উল্লেখ করা হবে।
এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের আওতাধীন মর্গ সূত্রে জানা গেছে, ছয়টি আঘাতের (ধারালো অস্ত্রের) চিহ্ন শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি গুরুতর।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বোর্ড/কমিটি গঠন করে। যে বোর্ডে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জামিল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়।
কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মাইদুল হোসেন ও ডা. সোহেলী আক্তার তন্নী।
এর আগে শেবাচিম হাসপাতালের লাশ রাখা কক্ষ থেকে সকাল ১০টার দিকে রিফাত শরিফের মরদেহ মর্গে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বেলা ১১টা ১০ মিনিট থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত চলে ময়নাতদন্তের কার্যক্রম। ময়নাতদন্ত শেষে নিহত রিফাতের মরদেহ নিয়ে দুপুর ১টার দিয়ে স্বজনরা সড়কপথে বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা করে।
এদিকে বুধবার রিফাত শরিফের মৃত্যুর পর পরই বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুল ইসলাম মরদেহের সুরতহাল করেন। যে প্রতিবেদনে নিহতের মাথার ওপর কোপের জখম, গলার ডান পাশে লম্বা কোপের জখম (সেলাই করা), বুকের ডান পাশে কাঁধ সলগ্ন কোপের জখম (সেলাই করা), বাঁ হাতের কনুইয়ের নিচে কোপের জখম এবং বৃদ্ধা আঙুলে কোপের জখমের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
গতকাল বুধবার সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে তাঁর স্বামী নেয়াজ রিফাত শরিফকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। স্ত্রী ও এক যুবক বাধা দিয়েও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি।
হামলার পর শরিফকে গুরুতর আহতাবস্থায় প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিক তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভর্তির এক ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শরিফের মৃত্যু হয়।
শরিফকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সন্ত্রাসী দুই যুবক ধারালো দা দিয়ে একের পর এক কোপাতে থাকে শরিফকে। এ সময় শরিফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুই সন্ত্রাসীকে বারবার প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এ ঘটনাটি পুলিশের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় ছিল। নিহত রিফাত শরিফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল হালিম দুলাল শরিফ। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে রিফাত।
ভিডিওচিত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, ভিডিওচিত্রে যে দুই সন্ত্রাসীকে কুপিয়ে জখম করতে দেখা গেছে, তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং অন্যজন রিফাত ফরাজী। তাঁরা উভয়েই স্থানীয়ভাবে ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব ঘটনায় একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছে বলে বরগুনা থানা সূত্রে জানা গেছে।