প্রেম, বিয়ে ও নির্মম পরিণতি

Looks like you've blocked notifications!

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দিনারা গ্রামের লিয়াকত ঢালী (২৭) নামের এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর মৃতুর খবর শুনে স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার (২০) কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আজ রোববার দুপুর ২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

পুলিশ লিয়াকতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। ইয়াসমিন আক্তার নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নড়িয়ার দিনারা গ্রামের ডি এম হারুন অর রশীদের ছেলে লিয়াকত ও একই গ্রামের ইয়ারবক্স সরদারের মেয়ে ইয়াসমিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রায় তিন মাস আগে ইয়াসমিনের পরিবার তাঁকে অন্যত্র বিয়ে দেয়। বিয়ের একদিন পরে লিয়াকত ইয়াসমিনকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে গ্রামের লোকজনের সামনে ইয়াসমিনকে বিয়ে করার কথা বললে স্থানীয় মাতব্বররা মেয়েটিকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন। লিয়াকত  ইয়াসমিনকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দিলে ইয়াসমিন তাঁর স্বামীকে তালাক দিয়ে দেন। কয়েকদিন পরে লিয়াকত তাঁকে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেন। পরে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে লিয়াকত ও তাঁর মা-বাবাকে আসামি করে ইয়াসমিন নড়িয়া থানায় মামলা করেন। মামলার তুলে নেওয়ার শর্তে লিয়াকত ইয়াসমিনকে বিয়ে করে। বিয়ের কয়েক দিন পর থেকে লিয়াকতকে তালাক দিতে ইয়াসমিনকে চাপ দিতে থাকেন লিয়াকত ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার দেন-দরবার হয়। সাতদিন আগে তালাকের জন্য চাপ দিলে ইয়াসমিনের পরিবার তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে আসে।

আজ রোববার দুপুর ২টার দিকে নিজ ঘরের আরার সঙ্গে লিয়াকতকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তাঁর মা মমতাজ বেগম। মমতাজ বেগমের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে লিয়াকতকে নিচে নামায়। পরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে লিয়াকতের মৃতুর খবর শুনে ইয়াসমিন তাঁর বাবার বাড়িতে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বাড়ির লোকজন দ্রুত তাঁকে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ইয়াসমিন এখন সেখানে চিকিৎসাধীন।

লিয়াকতের বাবা ডি এম হারুন অর রশীদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মামলার ফাঁদে ফেলে আমার ছেলের কাছে মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়া হয়। মামলা তুলে না নেওয়ায় আমার ছেলে আজ আত্মহত্যা করেছে।’

ইয়াসমিনের ভাই আল আমীন বলেন, ‘বিয়ের কয়েকদিন পর থেকেই তালাক দেওয়ার জন্য আমার বোনের ওপর নির্যাতন শুরু করে লিয়াকত ও তাঁর পরিবার। পরে আমরা বোনকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। লিয়াকতের আত্মহত্যার খবর শুনেই আমার বোন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’

যোগাযোগ করা হলে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া বলেন, ছেলেটির বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছিল মেয়েটি। পরে স্থানীয়ভাবে সমঝোতার মাধ্যমে মেয়েটিকে বিয়ে করেন লিয়াকত ঢালী। লিয়াকতের মৃতদেহ সদর হাসপাতালে রয়েছে। পালং থানা পুলিশ তাঁর লাশের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা নিচ্ছে।’