মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন, শুনানি কাল

Looks like you've blocked notifications!
বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। পুরোনো ছবি : এনটিভি

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি নুরুজ্জামান ননীর আদালতের মিন্নির জামিন স্থগিতের আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

আজ রোববার বিকেল ৪টার দিকে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সুফিয়া খাতুন এ আবেদন দাখিল করেন।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হাইকোর্টে জামিন দেওয়ার পর জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদনের জন্য নোট দিয়েছি। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে আবেদন করা হয়েছে।’  

গত ২৯ আগস্ট বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে স্থায়ী জামিন দেন। আদেশে আদালত আরো বলেন, এই সময়ে মিন্নি তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।

আদালত আদেশে বলেন, ‘এজাহারে মিন্নির নাম না থাকা, গ্রেপ্তারের পূর্বে আটক করে স্বীকারোক্তি আদায় করা, মিন্নির স্বীকারোক্তি আদায়ের পূর্বে পুলিশ সুপারের বক্তব্য দেওয়া এবং ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মিন্নির নির্দোষ দাবি করা, তদন্ত শেষ পর্যায়ে থাকায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী নারী ও শিশুর জন্য বিশেষ ব্যতিক্রম বিবেচনায় মিন্নির জামিন মঞ্জুর করলাম।’

রায় শেষে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের জানান, এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার আগেই মিন্নিকে নিয়ে পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারেও আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। তাতে আদালত বলেছেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা আইনসম্মত নয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্রিফিং নিয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি মামলাটি তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় মিন্নির বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ায় পুলিশ সুপারের  বিরুদ্ধে বিভাগীর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ২০ আগস্ট হাইকোর্টের এই বেঞ্চ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে এক সপ্তাহের রুল জারি করেছিলেন। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ২৮ আগস্ট কেস ডকেট নিয়ে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

এ ছাড়া বরগুনার পুলিশ সুপারকে মামলার তদন্ত চলার সময়ে মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন মর্মে মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দেওয়ায় এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

গত ৮ আগস্ট আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন ফেরত দেন বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই দিন হাইকোর্ট বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দেননি। জামিন আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল দিতে চাইলে মিন্নির আইনজীবীরা তাতে সম্মত হননি। পরে আদালত জামিন আবেদন ফেরত দেন।

এর আগে গত ৫ আগস্ট মিন্নির জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গত ৩০ জুলাই মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

২২ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। ওই দিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

পরদিন ২৩ জুলাই ‘মিস কেস’ দাখিল করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে ফের জামিনের আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের নথি তলব করে ৩০ জুলাই জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।

সেদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে উভয় পক্ষের শুনানি চলতে থাকে। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আদালতে উপস্থিত হলে এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সবার উপস্থিতিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ল্যাপটপে হত্যাকাণ্ডের আগের ও পরের ভিডিও ফুটেজ দেখান। এ ছাড়া মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিসহ হত্যার আগে ও পরে প্রধান আসামি নয়ন বন্ডসহ অন্যান্য আসামির সঙ্গে মিন্নির কললিস্টের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। শুনানি শেষে মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মিন্নি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়।

এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। পরে ১৬ জুলাই রাতে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।