বান্দরবানে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃতরা নেমেছেন জাতীয় পার্টির প্রচারে
বান্দরবান পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতারা ‘লাঙ্গলে হবে মঙ্গল’ স্লোগান নিয়ে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বিপ্লবের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বলে দাবি স্থানীয় ভোটারদের।
২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বান্দরবান সদর পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান বিপ্লব। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়ায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাঁকে। বহিষ্কারের দীর্ঘ পাঁচ বছর পর জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন আগামী ৩০ ডিসেম্বর ঘোষিত পৌরসভা নির্বাচনে।
প্রতীক ভিন্ন হলেও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত এ নেতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৭ বছরের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা এবং ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বহিষ্কৃত জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৪ বছরের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমানের অনুসারীরা।
‘লাঙ্গলে হবে মঙ্গল’ স্লোগানে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও গোপনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন ব্যক্তি মিজানের পক্ষে। অনেকে নির্বাচনী খরচের জন্য আর্থিক সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন বলেও কথা রয়েছে ভোটারের মুখে মুখে।
স্থানীয়রা জানান, সংগঠনের কোনো পদে না থাকলেও বহিষ্কৃত সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমানের এখনো রাজনৈতিক বলয় রয়েছে। দুজনের অনুসারী নেতাকর্মী এবং অনুসারীরা এখনো রাজপথে সক্রিয়। পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বহিষ্কৃত এ দুই নেতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবেন প্রার্থীদের জন্য। তাঁরা দুজন প্রকাশ্যে মাঠে না থাকলেও গোপনে ভোটের হিসাব-নিকাশটা পাল্টে দিতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃতরা এক জোট হচ্ছে—কথাটি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা।
আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত এ সভাপতি (প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা) বলেন, মানুষ মুখোরোচক অনেক কথাই বলে। নির্বাচনী মাঠে এ ধরনের গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু বহিষ্কার করা হলেও দলীয় সদস্যপদ এখনো আছে আমার। আমার প্রতীক নৌকা। দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে। প্রতীকের বাইরে যাওয়ার সাধ্য কারো নেই। অন্যদের ব্যাপারে বলতে পারব না, আমি নৌকার সঙ্গেই আছি। আর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ইসলাম বেবী একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ। নৌকার লড়াকু সৈনিক এবং আমার খুবই পছন্দের ব্যক্তি।
জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের বিকল্প নেই। আমি এখনো আওয়ামী লীগের বৈধ সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ আমার ঠিকানা এবং নৌকা প্রতীক আমার পরিচয়। দলীয় প্রতীকের বাইরে আমি কোনোদিনও যাইনি, আগামীতেও যাব না। আমায় কেউ ডাকুক আর নাই ডাকুক। নির্বাচনী কৌশল হিসেবে কেউ গুঞ্জন ছড়াতে পারে।’
তবে এগুলো রাজনৈতিক অপপ্রচার বলে দাবি করে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘প্রতিপক্ষরা রাজনৈতিক ফায়দার জন্য নির্বাচনী মাঠে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃতরা আমার পক্ষে কাজ করবে কেন? আমি তো জাতীয় পার্টির প্রার্থী, দলীয় প্রতীক লাঙ্গল মার্কায় নির্বাচন করছি। গুঞ্জনে কান দেবেন না ভোটারেরা।’
প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সালে বান্দরবান পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের আধিপাত্য ছিল। শুধু ২০১১ সালে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ রেজা মেয়র নির্বাচিত হয়েছিল। পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২৬ হাজার ৬৪৭ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১৫ হাজার ৫০৭ ও নারী ১১ হাজার ১৪০ জন। ভোটযুদ্ধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. ইসলাম বেবী, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ রেজা এবং জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বিপ্লব।