যুদ্ধাপরাধীদের শুধু ফাঁসি দিলেই চলবে না : ডিআইজি নুরুজ্জামান
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের শুধু ফাঁসি দিলেই চলবে না; তাদের লাশগুলো কবরে না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আগামী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের কাছে তাদের অপরাধের ইতিহাস তুলে ধরে সংরক্ষণ করতে হবে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার গাজীপুরে আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ডিআইজি নুরুজ্জামান এসব কথা বলেন। গাজীপুরের পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা পুলিশ লাইন মিলনায়তনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
ডিআইজি নুরুজ্জামান বলেন, ‘একাত্তরে যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সহায়তা ও আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও ইজ্জতহানি করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে এ দেশকে ছারখার করেছে, যারা এ দেশের ২০ লক্ষাধিক সাধারণ মানুষসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, যারা এ দেশ ও দেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না-আমি মনে করি সেই যুদ্ধাপরাধীদের শুধু ফাঁসি দিলেই চলবে না। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের পর তাদের সন্তান ও আত্মীয়স্বজনদের আস্ফালন দেখে মনে হয় সাপের বাচ্চা সাপই হয়। তারা কখনোই এ দেশ ও এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মেনে নেয়নি। তাই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের পর তাদের লাশগুলো কবরে না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আগামী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের কাছে তাদের অপরাধের ইতিহাস তুলে ধরে সংরক্ষণ করতে হবে। মানুষ যখন সেখানে তাদের দেখতে যাবে, তখন তাদের অপরাধের ইতিহাস জেনে থুতু মারবে। তাদের রাষ্ট্রীয় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। পোল্যান্ডের মতো রাষ্ট্রীয় শত্রুদের সন্তান ও আত্মীয়স্বজনদের চাকরি ও ভোটাধিকারসহ সব অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে হবে।’
এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, ‘আজ লজ্জা লাগে যে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বারবার করা হচ্ছে। অথচ যারা আমাদের মা বোনদের ধর্ষণ ও ইজ্জতহানি করেছে, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়েছে ও লুটতরাজ করেছে, এ দেশের সাধারণ মানুষসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, এ দেশ ও দেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না–তাদের তালিকা এখনো তৈরি হয়নি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করব- মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের তালিকা তৈরি করে জনসম্মুখে প্রকাশের জন্য। তাদের সন্তান ও আত্মীয়স্বজনরা কে কোথায় কী করছে সেসব তথ্য ও ইতিহাস সংগ্রহ করার জন্য।’
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রহমত আলী, সাবেক ডিআইজি তোফাজ্জল হোসেন, সাবেক পুলিশ সুপার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন বীরবিক্রম, মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোজাম্মেল হক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, অ্যাডভোকেট হারিছ উদ্দিনসহ মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ১০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে আতশবাজি ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।