শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে
শিক্ষা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায় এবং একজন শিক্ষক মানবতার সেবা করেন বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেছেন, মানুষের মধ্যে যে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক হজরত খান বাহাদুর আহছানউল্লাহর (রহ.) আদর্শ ও নীতি তুলে ধরে বলেন, তিনি সত্যের পথে থাকার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। শিক্ষা সংস্কার করে তা জীবনমুখী করে তুলেছেন। নিজের আত্মাকে জয় করাই শ্রেষ্ঠ জেহাদ বলে উল্লেখ করেন উপাচার্য।
উপাচার্য শনিবার সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা আহছানিয়া মিশন প্রাঙ্গণে খান বাহাদুর আহছানউল্লাহর ১৪২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
হজরত খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (রহ.) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মন্তব্য করে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, তিনি পরীক্ষার খাতায় নাম নয়, রোল নম্বর লেখার নিয়ম চালু করেছিলেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক হজরত খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ স্কুল-কলেজের হোস্টেলে হিন্দু মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মের ছাত্রদের থাকার নিয়মও প্রবর্তন করেন। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে তাঁর সংযুক্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
খান বাহাদুর আহছানউল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে উপাচার্য আরো বলেন, ধর্মে ধর্মে মানুষ মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। বিভিন্ন ধর্মের লক্ষ্য ও গন্তব্য এক।
উপাচার্য রাজশাহীর বাগমারায় মসজিদে ঢুকে গুলির ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, মানুষ অহংকারী হয়ে উঠছে। তারা সহায়-সম্পদ, ধন-দৌলত জোগাড়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ১৯৭১-এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাংলাদেশে গণহত্যার চিহ্ণ সারা দেশজুড়ে রয়েছে। অথচ পাকিস্তান ৩০ লাখ সন্তানকে হত্যার পরও এখন তা অস্বীকার করছে। এই মিথ্যাচারের জন্য স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
একাত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বর্বর হত্যার কাহিনী তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, তারা ধর্মের নামে মানবতার ওপর নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে। বহু নারীকে ধরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করেছে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশে আসা বিদেশি নাগরিক ড. ড্যাভিস তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কমপক্ষে চার লাখ নারীকে এভাবে পাশবিক নির্যাতন করেছিল।
উপাচার্য বলেন, যতক্ষণ না পাকিস্তান তার অপরাধ স্বীকার করে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
আহছানিয়া মিশনের সভাপতি মো. সেলিমউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ড. গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, ড. এহছানুর রহমান, মো. এনামুল হক, মো. সাঈদুর রহমান, মো. আবদুল মজিদ প্রমুখ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গাজী আজিজুর রহমান।