মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যকারীদেরও সম্মাননা দেওয়ার প্রস্তাব
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশে ও পার্শ্ববর্তী দেশের যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন, আশ্রয় দিয়েছেন এবং রিক্রুট করে অবদান রেখেছেন তাঁদেরও সম্মাননা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১১তম বৈঠকে এ প্রস্তাব করা হয়। এতে কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বিগত বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি এবং জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের (জামুকা) সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় পাকা বাসস্থান নির্মাণের জন্য ২২৯৭টি বাসস্থানের বাস্তাবায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮৯৭টির কাজ সমাপ্ত হয়েছে, ১১০৬টির কাজ চলমান এবং ২৯৪টির দরপত্র প্রক্রিয়াধীন।
জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত তালিকা জরুরি ভিত্তিতে সম্পাদন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।
এ ব্যাপারে কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, জামুকা যাদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে; তাতে গ্রামে যারা সার্টিফিকেট নিয়েছে ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাহায্য বিষয়ে নীতিমালা সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির’ সভাপতি বলেন, কমিটির আলোচনায় আসে যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অনেক ব্যক্তি যাঁরা দেশে ও পার্শ্ববর্তী দেশে ছিলেন। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য ও রিক্রুট করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু তারাঁ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তাই তাঁরা তাঁদের অবদানের জন্য কোনো সম্মাননা পাননি। তাঁদের সম্মাননা দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রীকে বলা হয়েছে, যাতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলে একটি অনুশাসন নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়।
এ ছাড়া কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে সারাদেশে যখন তোলপাড় চলছে তখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এসব মন্তব্যকে ‘গুরুত্বহীন’ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলেও জানান এ বি তাজুল ইসলাম।
কমিটি সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে কমিটির সদস্য কামরুল লায়লা জলি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়া ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা তুলেছিলেন। কিন্তু কমিটিতে বিষয়টি ‘তুচ্ছ’ হিসেবেই গণ্য করা হয়েছে। পরে কমিটির সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনা তোলেননি।
সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় কি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিলেন? তিনি তো পাকিস্তানের আর্মির জেনারেলের সঙ্গে অতিথি হিসেবে দিন কাটিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে জঙ্গলে যুদ্ধ করেছেন সেটা তিনি কীভাবে জানেন। এটা আসলে খুবই হাস্যকর ও স্টুপিডের মতো মন্তব্য করেছেন তিনি। এসব বিষয় মীমাংসিত হওয়ায় আমরা কমিটিতে বিষয়টিকে ‘ইনসিগনিফিকেন্ট’ মনে করেছি।’
এ ছাড়া বৈঠকে হাটবাজারের আয়ের চার শতাংশ অর্থ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন চালানো, সংগঠন শক্তিশালীকরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা, সেমিনার করার জন্য অর্থ বরাদ্দ অথবা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে বাজেটে পৃথক অর্থ বরাদ্দ রাখার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নুরুন্নবী চৌধুরী, আশেক উল্লাহ রফিক, স্বপন ভট্টাচার্য্য ও কামরুল লায়লা জলি অংশগ্রহণ করেন।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।