শৈলকুপায় ৩ শিশু হত্যায় ইকবালের জবানবন্দি

Looks like you've blocked notifications!
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় তিন শিশুকে হত্যার ঘটনায় আটক তাদের আত্মীয় ইকবাল। ছবি : এনটিভি

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় নৃশংসভাবে তিন শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন শিশুদের আত্মীয় ইকবাল হোসেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে ইকবালকে আদালতে হাজির করা হয়। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা তাঁকে সময় দেন বিচারক। বিকেল ৫টার দিকে ঝিনাইদহের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবদুল মতিন জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে রেকর্ড করেন। 

জবানবন্দিতে ইকবাল তিন শিশুকে হাতুড়িপেটা করে আহত করার পরে গ্যাস সিলিন্ডার রুমের মধ্যে ছেড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এমনটিই আদালতের কাছে বর্ণনা দিয়েছেন মর্মে নিশ্চিত করেছেন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শৈলকুপা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক।

এসআই এমদাদুল হক বলেছেন, আসামিকে বিশেষ ব্যবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের একটি তদন্ত দল। টানা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ইকবাল আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। এর আগে সোমবার রাতে তিনি তদন্ত দলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। 

এদিকে তিন শিশুর হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহের শৈলকুপার মানুষের আহাজারি থামছে না। সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছে না তারা। আজ মঙ্গলবার সন্তানের কবরের পাশে বসে ছিলেন উপজেলার কবিরপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর ভগ্নিপতি উপজেলার মনহরপুর গ্রামের রাশেদ। নাওয়া-খাওয়া বন্ধ তাঁদের। 

নিহত সাফিন ও আমীনের মা শিউলি বুক চাপড়ে কাঁদছেন। মাহিনের মা স্কুলশিক্ষক জেসমিন সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রতিবেশীরা শোকাহত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা সর্বক্ষণ সান্ত্বনা দিচ্ছেন তাঁদের। তবু কাজ হচ্ছে না। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে নিহত স্কুলছাত্র মোস্তফা সাফিন (১০) ও মোস্তফা আমীনের (৮) বাবা স্কুলশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। আপন বড় ভাই ইকবাল হোসেনকে ওই মামলায় একমাত্র আসামি করেছেন। একই দিন স্থানীয় চাররাস্তার মোড়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে হাজার মানুষ। ইকবালের ফাঁসির দাবি জানায় তারা।
শৈলকুপার কবিরপুর গ্রামে সারের ব্যবসা করেন গোলাম নবী। তাঁর দুই ছেলে। বড় ছেলে ইকবাল আট বছর বিদেশে চাকরি করে চার মাস হলো দেশে ফিরেছেন। বিদেশ থেকে পাঠানো ৩৯ লাখ টাকার হিসাব নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। শৈলকুপার একটি ব্যাংকে বাবার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছিলেন ইকবাল। ছোট ভাই দেলোয়ার বাবার পক্ষে মৌন অবস্থান নেন। বাবা গোলাম নবী সব টাকা ফেরত দেওয়ার আগে বেকে যাওয়া ছেলেকে দোকানে বসানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। গত রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইকবাল তাঁর ভাতিজা সাফিন ও আমীন এবং ভাগ্নে মাহিনকে ঘরে আটকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেন।