ক্রেতা নেই, সড়কেই ধান ফেললেন কৃষকরা
ধানের দাম কমতে কমতে ৪০০ টাকা মণে দাঁড়িয়েছে। তবু ধান কেনার কোনো ক্রেতা নেই। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন পঞ্চগড়ের কৃষকরা।
আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত কৃষকরা জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি হাটে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা মহাসড়কে ধান ফেলে ও ধানের ভ্যান-ট্রলি এলোমেলো করে রেখে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। বোদা উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাসে সোয়া দুই ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা ধান বিক্রি করতে ময়দানদীঘি হাটে আসেন। গত হাটগুলোতে ধান ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও আজ ৪০০ টাকা দিয়েও ধান কেনার কোনো ব্যবসায়ী ছিল না। ধান কেনার জন্য হাটের কোথাও কোনো ব্যবসায়ী কাটা (দাঁড়িপাল্লা, বাটখাড়াসহ ধান কেনার সরঞ্জাম) লাগাননি। ধান না কেনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কৃষকরা। তাঁরা পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে ধান ফেলে ও ধানের ভ্যান-ট্রলিগুলো এলোমেলো করে রেখে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
কৃষকরা বলেন, সার, কীটনাশক, বীজসহ সব কৃষি উপকরণের দাম বাড়লেও ধানের দাম বাড়ছে না। ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি করতে না পারায় সবক্ষেত্রেই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। ধান লাগিয়ে মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন তাঁরা।
মহাসড়ক অবরোধের কারণ জানতে চাইলে ময়দানদীঘি মহাজনপাড়া এলাকার কৃষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিক্রির জন্য ধান নিয়ে আসছি হাটে। ব্যবসায়ীরা ধান না কিনে কাটা খুলে রেখেছেন। ধানের দাম নেই। তাই আমরা কৃষকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছি।’
বোদা উপজেলার মীরপাড়া এলাকার কৃষক আবদুর রহমান বলেন, ‘৭০০-৮০০ টাকা ধানের দাম হলে কিছুটা পোষায়। এর কম হলে আমরা বাঁচতে পারব না।’
বোদা উপজেলার তেপুখুরিয়া এলাকার কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘১০ বছর আগে ধানের দাম ৪০০ টাকা ছিল। তখন সার, বীজ, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম অনেক কম ছিল। ওই সময় লবণের কেজি ছিল ছয় টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০-২৫ টাকা। সারের বস্তা ছিল ২০০-২৫০ টাকা। এখন সারের বস্তার দাম ৮০০ টাকা। অন্যান্য জিনিসপত্র তো আছেই। শুধু কী তাই। ছেলেমেয়েদের ভর্তি ফি, বেতন, তাদের শিক্ষাউপকরণের দাম অনেক বেড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে কিন্তু ধানের দাম নেই। এভাবে কি আমরা টিকে থাকতে পারব?’
বোদা উপজেলার ধনীপাড়া এলাকার কৃষক জয়নউদ্দিন বললেন, ‘এক মণ ধান বেঁচে এক কেজি ভুট্টার বীজ কিনতে পারি না। ধান বিক্রি করে আজকাল কিছু করতে পারি না। আগে ধান বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের কাপড়সহ পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচ মেটানো সম্ভব হতো। ধান বিক্রি করে মেয়ে বিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু এখন ধান বেঁচে খরচের টাকাই উঠছে না। আমরা ধানের ন্যায্যদাম দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।’
এদিকে মহাসড়ক অবরোধের কারণে সাইকেল, মোটরসাইকেলসহ কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। অবরোধের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। পথচারী ও যাত্রীরা সাময়িক দুর্ভোগে পড়েন।
খবর পেয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আউয়াল, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন, বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থলে এসে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তাঁরা ন্যায্য মূল্যে ধান কেনার ব্যবস্থা করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন, ধানের দাম বৃদ্ধির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাবেন। এ ছাড়া তাঁরা স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেন। সংসদ সদস্য বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করবেন বলে কৃষকদের জানালে কৃষকরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।