যশোরকে বিভাগ ঘোষণার দাবি
বৃহত্তর যশোরের নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোরকে নিয়ে পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ঢাকাস্থ বৃহত্তর যশোর সমিতি এবং বিভাগ আন্দোলন পরিষদ। সে সঙ্গে মাগুরাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে সংযুক্তির প্রচেষ্টার প্রতিবাদে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বৃহত্তর যশোর সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি জামাল উদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি প্রকৌশলী এম এ ওহাব, যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সাত্তার, সদস্য সচিব হাসানুজ্জামান বিপুল, যশোর ইনফো ওয়েবসাইট সংগঠনের সভাপতি ভবতোষ মুখার্জি সুবীর, যশোর ইনফো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সিদ্দিকী মিশু, মাগুরা জেলা সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন, নড়াইল জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার হুমায়ুন কবির, বৃহত্তর যশোর সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট নুরুল কাদিরসহ আরো অনেকে।
যশোর বিভাগ আন্দোলন পরিষদ ঢাকার সদস্য সচিব মো. হাসানুজ্জামান বিপুলের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৃহত্তর যশোর বাংলাদেশের এক সমৃদ্ধ জনপদ। প্রশাসনিকভাবে যশোরের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিকভাবে শত শত বছর পূর্ব থেকেই যশোরের পৃথক পরিচিতি বিদ্যমান। কিন্তু এহেন যশোর বর্তমানে ক্ষয়িষ্ণু এবং পশ্চাৎপদ জেলায় পরিণত হতে চলেছে। বাংলাদেশের অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে যশোর বিভাগ ঘোষণার যৌক্তিকতা রয়েছে। বৃহত্তর যশোরের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ভিন্ন। ব্রিটিশ আমলে কলকাতার পশ্চাৎভূমি হিসেবে যশোর ভিন্ন মর্যাদায় আসীন থাকলেও সে মর্যাদা এখন বিলীন হতে চলেছে।
বক্তারা বলেন, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোরকে নিয়ে বৃহত্তর যশোর। বিভাগীয় অনেক অফিস বর্তমানে যশোরে রয়েছে। খুলনা বিভাগের মধ্যবর্তী স্থান হিসেবে যশোর থেকে দেশের যেকোনো দূরত্বে দ্রুত যাতায়াত করা যায়। যশোর জেলা খাদ্যশস্য, মাছের পোনা, সবজি, খেজুরের গুড়, ফুল ও গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদনে বিখ্যাত। বেনাপোল বন্দর থেকে বছরে তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। নওয়াপাড়া শিল্পনগরী ও নৌবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোন রয়েছে এই জেলায়। বাংলাদেশের প্রধান পাঁচটি রাজস্ব প্রদানকারী জেলার একটি যশোর, যা খুলনা বিভাগে প্রথম। বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন জেলা এবং সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর মধ্যে দুজনই বৃহত্তর যশোরের কৃতী সন্তান। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে যশোরকে পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও যশোরের পৃথক পরিচিতির কথা তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সুষম উন্নয়নের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে পৃথক বিভাগ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বৃহত্তর যশোরের অঙ্গ হিসেবে পরিচিত মাগুরাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি মহল তৎপরতা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে মাগুরায় সর্বস্তরের জনসাধারণ এই তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা কিছুতেই যশোরকে ছেড়ে ফরিদপুরের সঙ্গে যেতে চান না।
সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর যশোরের নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোরকে নিয়ে একটি পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে মাগুরাকে ফরিদপুরের সঙ্গে সংযুক্তির প্রচেষ্টা ত্যাগ করে বৃহত্তর যশোরের পৃথক পরিচিত বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়।