মনোনয়ন নিয়ে সংঘর্ষ, সাবেক-বর্তমান চেয়ারম্যানসহ আহত ২৬
সাতক্ষীরায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানসহ অন্তত ২৬ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার মহিষকুড় এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ধারালো দা ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করা হয়। তবে পুলিশের দাবি, সংঘর্ষ কিলঘুষির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কারো বাড়িঘরে কোনো হামলা বা ভাঙচুর করা হয়নি।
শ্রীউলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সরদার জানান, তৃণমূল পর্যায় থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাই করার সময় তিনি ৬৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৫৫ জনের ভোট পেয়ে একক প্রার্থী ঘোষিত হন। সে অনুযায়ী তাঁর নাম উপজেলার সাধারণ সম্পাদক জেলাপর্যায়ে পাঠান। তবে জেলা থেকে তাঁর নাম এক নম্বরে এবং বর্তমান চেয়ারম্যান শাকিলের নাম দুই নম্বরে লিখে পাঠানো হয়। তবে কেন্দ্র তাঁদের মধ্য থেকে আবু হেনা শাকিলকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলে এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
নূর মোহাম্মদ আরো জানান, আজ সকালে দলের কর্মী-সমর্থকদের অনুরোধে তিনি তিন-চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকার মাড়িয়ালায় যান। সেখান থেকে ফেরার সময় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু হেনা শাকিল ও তাঁর ছেলে সাদ তাঁর ওপর হামলা করেন। তাঁরা নূর মোহাম্মাদকে ধারালো দা দিয়ে কোপাতে শুরু করলে সমর্থকরা তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। এ সময় সমর্থকদের ওপরও হামলা করা হয় বলে দাবি করেন নূর মোহাম্মদ।
নূর মোহাম্মদের দাবি, হামলায় কমপক্ষে আটজন সমর্থক আহত হন। এ সময় মহিষকুঁড় বাজারের লোকজন তাঁদের প্রতিহত করতে শাকিল গ্রুপের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এতে শাকিল গ্রুপের কয়েক সদস্য আহত হন। এর পরপরই আশাশুনি থানা থেকে পুলিশ আসার পর তাদের সামনেই শাকিলের সমর্থকরা শ্রীউলা গ্রামে নুর মোহাম্মদ সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালায়।
নূর মোহাম্মদ জানান, তিনি ও তাঁর সমর্থকরা এখন প্রাণভয়ে আত্মগোপন করে রয়েছেন।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে আবু হেনা শাকিল সাংবাদিকদের বলেন, ‘নুর মোহাম্মদ মাড়িয়ালা গ্রামে এসে বলেন যে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিপক্ষে লড়বেন। তিনি নৌকায় ভোট না দেওয়ার জন্য নানা রকম উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন।’
শাকিল দাবি করেন, নূর মোহাম্মদ সরদারের লোকজনই তাঁর ওপর প্রথমে হামলা চালায়। এতে তাঁর পক্ষের ১৮ জন আহত হয়েছেন।
দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হন নূর মোহাম্মদ গ্রুপের মুকুল, ইয়াসিন, রাশেদ, শাহেদ এবং সাকিল গ্রুপের সোহরাব, রায়হান, শামীম, কোহিনুর, মতি, হামিদ, মোস্তফা, মুস্তাফিজ, রমজান, সিরাজুল, আসাদুলসহ ২৬ জন। আহতদের আশাশুনি হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ।
এ বিষয়ে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পুলিশের উপস্থিতিতে নূর মোহাম্মদ সমর্থকদের বাড়িতে কেউ হামলা করেনি বলেও দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ওসি বলেন, ‘মনোনয়নপ্রাপ্তির আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনার কারণে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে কিল-ঘুষি মারার মতো কিছু ঘটনা ঘটেছে। এতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’