বললেন বিজিবির মহাপরিচালক

সময়োপযোগী আইন থাকলে বিডিআর বিদ্রোহ হতো না

Looks like you've blocked notifications!
২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত এক কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করে আনা হচ্ছে। ছবি : রয়টার্স

সময়োপযোগী আইন না থাকাই বিডিআর বিদ্রোহের অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। বিদ্রোহের জন্য কঠিন আইন থাকলে ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ হতো না বলে মনে করেন তিনি।

বিডিআর বিদ্রোহের সপ্তম বার্ষিকী সামনে রেখে এনটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিজিবিপ্রধান বলেন, ‘এই আইন হওয়া উচিত ছিল ১৯৯১ সালে। তখন আরেকটা বিদ্রোহ হয়েছিল। তখন যদি এত টাফ আইন থাকত, তাহলে আমি মনে করি, ২০০৯ সালে যেটা হয়েছে সেটা হতো না।’

এ ছাড়া গোয়েন্দা দুর্বলতাকে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের অন্যতম কারণ বলে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এ-সংক্রান্ত সব তদন্ত কমিটি। সে কারণে কাউন্টার ব্যাটালিয়ন তৈরি করে বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি জানান, বিদ্রোহ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে পিলখানায় কোতের তালা ভেঙে অস্ত্র লুট হয়েছে, অথচ বাহিনীর গোয়েন্দারা তাদের ঊর্ধ্বতনদের কিছুই জানায়নি। বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘তখন যে রাইফেল সিকিউরিটি ইউনিট ছিল, তারা কিন্তু টোটালি কমপ্রোমাইজড হয়ে গিয়েছিল। কারণ এখানে হলো, গোয়েন্দাদের সদস্যরা দাঁড়ানো ছিল। তারা দেখতেছে কোত ভাঙতেছে অথচ তারা কোনো ইনফরমেশন দেয়নি।’

এখন সব রকমের খবর রাখছেন বলে জানান বিডিআরের বর্তমান মহাপরিচালক। বিভিন্ন ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের কর্মতৎপরতা বাড়িয়েছেন বলেও জানান তিনি।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদস্যদের বিদ্রোহে এক নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেদিন বিডিআর জওয়ানদের হাতে বাহিনীটির মহাপরিচালক ও সেনাবাহিনীর ৫৭ কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। অথচ এ বাহিনীর গর্ব করার মতো আছে অনেক কিছু। মুক্তিযুদ্ধে সাত বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে আছেন এ বাহিনীরই দুই সদস্য। আটজন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম আর ৭৭ জন বীর প্রতীক খেতাব পেয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন সীমান্ত বাহিনীর এই সদস্যরা।

রোমহর্ষক সেই হত্যা ও বিদ্রোহের ঘটনার বিচারিক আদালতে বিচার শেষ হয়েছে। নিজেদের কর্মকর্তাদের খুনের দায়ে ১৫২ বিডিআর জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিশেষ আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়েছে আরো ১৬১ জনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ২৬২ বিডিআর সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছে ২৭১ জন। বিজিবির মহাপরিচালক জানান, বিশেষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি চলছে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে ।

রায় ঘোষণার সময় আদালতের দেওয়া পর্যবেক্ষণে বিদ্রোহের জন্য 'রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মোটিভ' থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।

বিডিআর বিদ্রোহ ও খুনের ওই ঘটনায় মোট ১৭ হাজার ৩০৬ জনকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছিল। চূড়ান্তভাবে সাজা হয়েছে আট হাজার ১৪০ ও চাকরিচ্যুত হয়েছে আট হাজার ৭৫৯ জন এবং অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় খালাস পেয়েছে ৪০৭ জন।

ঘটনার পর বিডিআর বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। বদলে যায় বাহিনীটির নাম ও পোশাক। ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিল-২০১০ জাতীয় সংসদে পাস হয়। বিদ্রোহের মতো পরিস্থিতি এড়াতে নতুন আইনে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতিতেই বিজিবি সদস্যদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।