ইউপি নির্বাচনে বাধা, ফুলগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান বরখাস্ত
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল আলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে বাধা, ভয়-ভীতি দেখানো এবং নির্বাচন কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে আজ রোববার এ তথ্য জানানো হয়।
আজ সন্ধ্যায় এ-সংক্রান্ত চিঠি ফুলগাজীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এসে পৌঁছেছে। ফুলগাজীর ইউএনওর দায়িত্ব পালনকারী ফেনী সদরের ইউএনও পি কে এম এনামুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে একই অভিযোগে গত শুক্রবার আবদুল আলিমকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে ফুলগাজী থানার পুলিশ। গতকাল পৃথক দুই চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, বাধা, ভয়-ভীতি দেখানো এবং নির্বাচন কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করছে। যেকোনো সময়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ ঘটনায় এর আগে ওই উপজেলার সবগুলো ইউপিতে ভোট স্থগিত করে ইসি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউপি নির্বাচনে বাধা দেওয়ার ঘটনায় প্রথমবারের মতো একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কমিশন কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করেন এমন জনপ্রতিনিধিদের জন্য এটি একটি বার্তা হয়ে থাকবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আলিম কর্তৃক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে বাধা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, বেআইনি কার্যক্রম, গণতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা, জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার এবং নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, আবদুল আলিমের এ ধরনের কর্মকাণ্ড অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পরিষদ ও রাষ্ট্রের স্বার্থের হানিকর বিধায় উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮-এর ১৩ (১)(খ) ও (গ) ধারার অভিযোগে একই আইনের ১৩(২) ধারা অনুযায়ী আইনানুগ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
যেহেতু ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল আলিমের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮-এর ১৩ (২) ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাঁকে দিয়ে উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ জনস্বার্থের পরিপন্থী ও রাষ্ট্রের স্বার্থের হানিকর, সেহেতু উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮-এর ১৩ খ (১) ধারা অনুসারে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল আলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এ আদেশ জনস্বার্থে জারি করা হলো এবং অবিলম্বে তা কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ফুলগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান আবদুল আলিম ওই উপজেলার ছয় ইউপিতে মনোনয়নপত্র বিতরণে বাধা দেন। শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের তালিকা দিয়ে এর বাইরে কোনো প্রার্থীকে যাতে মনোনয়নপত্র দেওয়া না হয় সে জন্য নির্বাচন কর্মকর্তাকে হুমকি দেন। তাঁর হুমকি উপেক্ষা করে নির্বাচন কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বিতরণ করলে নির্বাচন কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেন এ উপজেলা চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় গত ২ মার্চ নির্বাচন কমিশন ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশনার পরই মামলা দায়ের ও সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি করল স্থানীয় সরকার বিভাগ।