‘জামায়াত-বিএনপিও’ আ. লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী!

Looks like you've blocked notifications!
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের আবেদনপত্র কিনে জমা দিয়েছেন ‘জামায়াত সমর্থক আলতাফ হোসেন (বায়ে) ও বিএনপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ওরফে রতন’। ছবি : এনটিভি

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘জামায়াত ও বিএনপি সদস্যদের’ কাছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে।

তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম পুন্নু। পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, যাঁদের জামায়াত ও বিএনপির সদস্য বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, তারা এরই মধ্যে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। 

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দিয়েছে দলের তৃণমূল নেতাদের। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠাবেন। কেন্দ্র থেকে তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে একটি চিঠিও তৃণমূল নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। 

কেন্দ্রীয় এ সিদ্ধান্তের পর উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৫৩ প্রার্থীর কাছে পাঁচ হাজার টাকা করে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্রের ওই চিঠি এবং সিদ্ধান্ত উপজেলা কমিটির কাউকে অবগত করা হয়নি। এমনকি উপজেলা কমিটির কাউকে নিয়ে কোনো সভাও হয়নি। 

পার্শ্ববর্তী শাহজাদপুর উপজেলা কমিটি প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের জন্য কোনো টাকা না নিলেও উল্লাপাড়ায় পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই ৫৩টি আবেদনপত্র জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই আবেদনপত্রের মধ্যে ‘জামায়াত সমর্থক আলতাফ হোসেন ও বিএনপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ওরফে রতন’ নামের দুজনের আবেদনও রয়েছে। 

বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এই ইউনিয়নে জামায়াতের একজন কট্টর সদস্য আলতাফ হোসেন ২০ দিন আগে শ্রমিক লীগে যোগদান করেন। এর পরই তিনি আবেদনপত্র সংগ্রহ করে তা উপজেলা কমিটির মাধ্যমে জেলায় পাঠান। 

আবু বক্কর সিদ্দিক আরো অভিযোগ করেন, আলতাফ হোসেন ২০০১ সালে বিএনপি ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের পক্ষে সরাসরি ভোট করেছেন। এ বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া হলেও লাভ হয়নি। এলাকার শত শত নেতাকর্মী প্রতিবাদ জানাচ্ছে। জামায়াত সমর্থকের কাছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করায় নেতাকর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ। 

এ ছাড়া উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন বিএনপি সদস্য’ রফিকুল ইসলাম রতনের আবেদনটিও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। দলের কতিপয় নেতাকর্মীর হাত করে তিনিও বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবি দিয়ে বিলবোর্ড টানানোসহ পোস্টার লাগিয়েছেন। 

উল্লাপাড়া বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রফিকুল ইসলাম রতন বেশকিছু দিন আগে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ছিলেন। তবে সেই কমিটি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য গাজী শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, ‘আমি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তালিকার বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি তৃণমূল নেতাদের নিয়েও সভা করা হয়নি। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে বেশ কিছু দিন আগে দলীয় কার্যালয়ে গেলে আহ্বায়ক আমাকে নানা হুমকি দিয়ে অপমান অপদস্থ করে কার্যালয় থেকে বের করে দেন। 

সাবেক সংসদ সদস্য আরো অভিযোগ করেন, ‘জামায়াত-বিএনপির সদস্যদের কাছে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির বিষয়ে অভিযোগ তোলা হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিভেদ ছড়িয়ে পড়ছে।’

তবে এসব বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম পুন্নু বলেন, প্রার্থীদের জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তালিকা চাওয়ায় সব আবেদনকারীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এখনো নির্বাচন দুই মাস দেরি রয়েছে। সে কারণে চূড়ান্ত কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। 

‘স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমামসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হবে। আর উপজেলা আওয়াম লীগ কার্যালয় মেরামত করার জন্য আবেদনপত্র বাবদ কিছু টাকা নিয়েছি। এটা দোষের কিছু নয়।’  

‘বিএনপি ও জামায়াতের সদস্যদের’ কাছে আবেদনপত্র বিক্রির বিষয়ে উপজেলা আহ্বায়ক বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম রতন এক সময় বিএনপির সদস্য ছিলেন। এক বছর আগে তিনি আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। জামায়াত সমর্থক আলতাফ হোসেন গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের যোগদান করেন। এখন সব আওয়ামী লীগের সমর্থক ও কর্মী। বিএনপি ও জামায়াতের কোনো কর্মী-সমর্থকের কাছে মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হয়নি। এখন তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থী বাছাই করবে। তারা যাঁকে সর্থমন দিবে তাঁরাই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হবেন।’