এমপির হাতে ম্যাজিস্ট্রেট ‘লাঞ্ছিত’

Looks like you've blocked notifications!
আজ বৃহস্পতিবার রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: কাজল বরুণ দাস

পটুয়াখালীতে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) মাহবুবুর রহমান তালুকদারের বিরুদ্ধে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। জাল ভোট দেওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছাত্রলীগকর্মীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।  

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে কাজীর হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অপরাধে সম্রাট নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে ছয় মাসের সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরশাদ উদ্দিন। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে বাহের চর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন তিনি। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মাহবুবুর রহমান তালুকদার সমর্থকদের নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকে ম্যাজিস্ট্রেটকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন।

পটুয়াখালী জেলা কালেক্টরেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরশাদ উদ্দিন বলেন, দলীয় কর্মীকে কেন সাজা দেওয়া হলো - এমন প্রশ্ন করে সমর্থকদের তাঁর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে উসকে দেন এমপি। এমনকি জাল ভোট দিতে বাধা দেওয়ায় তিনি ও তাঁর লোকজন বারবার তেড়ে এসে মারতে উদ্যত হন এবং একপর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে ওই কেন্দ্র থেকে বের করে দেন তাঁকে। 
ম্যাজিস্ট্রেট আরো জানান, ঘটনার সময় তিনি পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনা শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। 

রাঙ্গাবালী থানার সেকেন্ড অফিসার খলিলুর রহমান জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এরশাদ উদ্দিন এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ করেননি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর পক্ষ নিয়ে গংগীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ঢোকার সময় এমপি মাহবুবুর রহমান তালুকদার, তাঁর স্ত্রী স্মৃতি রহমান ও তাঁদের দলীয় সমর্থকরা প্রতিপক্ষ বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার মাস্টারের সমর্থকদের রোষানলে পড়েন। 

এ সময় এমপির সাথে থাকা কলাপাড়া থেকে আসা ছাত্রলীগের কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। এ সময় এমপি মাহবুব সস্ত্রীক কেন্দ্রের পাশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সদস্য নুরুল ইসলাম খলিফার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রতিপক্ষ প্রার্থীর সমর্থকরা ওই বাড়িতে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ ও র‌্যাব তাঁদের উদ্ধার করে রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরের বাহের চর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিয়ে যায়।

বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার মাস্টারের অভিযোগ, ওই কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে প্রবেশকালে তাঁর সমর্থক ও গ্রামবাসী তাঁদের তাড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রটি জাল ভোটমুক্ত করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিমুল হক বলেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে গালাগাল করার কথা শুনেছি। এ ছাড়া ইউপি উপনির্বাচন সংক্রান্ত সব বিষয় তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’

পুলিশ সুপার সৈয়দ মোসফিকুর রহমান জানান, আইনগত বিষয় নিয়ে কিছু একটা ঝামেলা হলেও এটা তেমন বড় কোনো ঘটনা নয়। পুলিশের দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যর্থতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার জানান, পুরো ঘটনা সত্য। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ মহলে বিষয়টি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে এমপি মাহবুবুর রহমান তালুকদারকে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তাঁর মোবাইলটি ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের প্রার্থী হুমায়ুন তালুকদার সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান তালুকদারের ভাগ্নে। রাঙ্গাবালী ইউপির উপনির্বাচনে এমপি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কিছুদিন ধরে ওই এলাকায় অবস্থান করছেন।

নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে একজন এমপি স্থানীয় সরকারের তৃণমূল জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সময় নির্বাচনী এলাকায় থেকে কীভাবে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন তা নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। 

শেষ খবরে জানা গেছে, আজ অনুষ্ঠিতব্য রাঙ্গাবালী ইউপির উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হুমায়ুন তালুকদার ছয় হাজার ৪৯৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম বিএনপির প্রার্থী আনোয়ার মাস্টার পেয়েছেন দুই হাজার ৪১৩ ভোট। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, নয়টি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটারের শতকরা ৬৪ ভাগ ভোট গৃহীত হয়েছে।