বেড়া পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুদকের চার মামলা
পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র এবং ও বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ আবদুল বাতেনসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুদক। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় তিন কোটি টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে দুদক।
আজ বুধবার আদালতে সকালে পাবনার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন পাবনা অফিসের সাবেক উপসহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পাবনার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. রেজাউল করিম অভিযোগপত্রগুলো গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, আলহাজ আবদুল বাতেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই।
গত বছরের ২৭ আগস্ট এবং ৩১ আগস্ট পাবনার দুদক অফিসের উপসহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় তিনটি মামলা করেন। পরে একটি মামলা ভেঙে দুটি মামলায় রূপান্তরিত হয়। আরেকটি অপরিবর্তিত থাকে।
দুই মামলায় অন্য অভিযুক্তরা হলেন, বেড়া পৌরসভার প্রকৌশলী খন্দকার ফিরোজুল আলম, সাবেক সচিব বর্তমান পঞ্চগড় পৌরসভার সচিব মো. রাশিদুর রহমান, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান হবি, আবু দাউদ শেখ, জয়নাল আবেদিন, শামসুল হক খান, এনামুল হক শামিম, আবদুর রাজ্জাক সরদার, ইসলাম উদ্দিন, আবদুস সামাদ মহলদার, শহিদ আলী, নার্গিস আক্তার, মোছা. জাকিয়া খাতুন এবং পৌর হাটের ইজারাদার মাহবুব হোসেন বাবলু, চাটমোহরের উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম সরওয়ার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম, পাবনার সাবেক জিপি অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন সবুজ, বেড়া পাউবোর তৎকালীন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী আ. আজিজ খান ও সাবেক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাজু আহমেদ।
পাবনা অফিসের দুদকের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, গত বছরের ২৭ আগষ্ট বেড়া থানায় সাড়ে ৭৬ লাখ টাকা এবং দুই লাখ তিন হাজার সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেড়া পৌর মেয়র আবদুল বাতেনসহ ১৪ জনের নামে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক।
তদন্তে এই মামলা দুটিতে আত্মসাত করা টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে এক কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার ৯৫ টাকা এবং ৪৭ লাখ ১২ হাজার ২৫০ টাকা। এ ছাড়া একই বছরের ৩১ আগস্ট দায়ের করা আরো একটি মামলা তদন্তের পর দুটি মামলায় পরিণত হয়। এখানে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাত, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলার বেড়া পৌর মেয়র আবদুল বাতেনসহ বেড়া সিএন্ডবি করমজা নতুনহাটের ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
এ ছাড়া বেড়া পৌর মেয়র আবদুল বাতেনসহ অভিযুক্তরা নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি হাটকে বেসরকারি ব্যক্তি মালিকানাধীন দেখিয়ে এক বছরের জায়গায় এক নাগাড়ে ১৩ বছর অবৈধভাবে ভোগদখল করে সরকারের বিপুল রাজস্বের ক্ষতি করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন এবং বিধি মোতাবেক সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেননি।
দুদক কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, দীর্ঘদিন অনুসন্ধানের পর সত্যতা পাওয়ায় গতকাল বুধবার পাবনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চারটি পৃথক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। যার নম্বর ৫২, ৫২(ক) ৫৩, ৫৪; এবং তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৬ ইং। পাবনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রেজাউল করিম অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে বেড়া পৌর মেয়র আলহাজ আবদুল বাতেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে করমজা হাটের ইজারাদার মাহবুব হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, পৌর মেয়রের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সরকারে কোষাগারে যে টাকা জমা দেওয়ার কথা ছিল তা যথা সময়ে পৌর মেয়রের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তাই এই মামলায় তাঁদের জড়ানো সঠিক হয়নি।