নেশাগ্রস্ত বাবার হাতে ছেলেশিশু খুন
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে নেশাগ্রস্ত ছেলের হাতে বাবা খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই পাকুন্দিয়ায় ঘটল আরেকটি লোমহর্ষক ঘটনা। এখানে নেশাগ্রস্ত এক বাবা গলা কেটে হত্যা করেছে তাঁর চার বছর বয়সী ছেলে ইমরানকে। এরপর নিজ বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে তার লাশ পুঁতে রাখে।
আজ শনিবার বিকেলে উপজেলার পাটয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের জুনাইল গ্রামের ওই বাড়ি থেকে ইমরানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ইমরানের লাশ কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ইমরানের বাবা আবুল কাশেমকে (৩০) এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের কাছে তিনি তাঁর নিজের সন্তানকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, কাশেম মাদকাসক্ত। কাশেমের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর বাবা সুলতান জুনাইল ছেড়ে পাশের কলাদিয়া গ্রামে গিয়ে থাকতেন। যে ঘরটিতে লাশ পুঁতে রাখা হয়েছিল। সেখানে কাশেম এক রাত অবস্থান করে।
কাশেমের বাবা সুলতান মিয়া জানান, তাঁর ছেলের কারণে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কাশেমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সে যেন আর জেল থেকে বের হতে না পারে।’
এদিকে এ লোমহর্ষক ঘটনার খবর শুনে শত শত এলাকাবাসী জুনাইল গ্রামে কাশেমের বাড়িতে ভিড় করে। ইমরানের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার জুনাইল গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে কাশেম দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত হয়ে কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। তাঁর প্রথম স্ত্রীর ঘরেও একটি সন্তান ছিল। কাশেম এতটাই নিষ্ঠুর প্রকৃতির যে ওই সন্তানটিকেও বিক্রি করে দিয়েছিল। স্বামীর এ অবস্থা দেখে ওই স্ত্রীও চলে যায়। পরে সাত বছর আগে মরিয়ম নামে একজনকে বিয়ে করে কাশেম। মরিয়মের ঘরে তুষামণি (৬) ও ইমরানের জন্ম হয়।
কাশেমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অভাবের তাড়নায় অতিষ্ঠ হয়ে তার স্ত্রী মরিয়ম কিছুদিন আগে মেয়ে তুষামণিকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ছেলে ইমরানকে রেখে যান দাদা সুলতান মিয়ার কাছে। গত বুধবার রাতে মাদকাসক্ত কাশেম তাঁর ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দাদার কাছ থেকে জুনাইল গ্রামে নিয়ে আসেন। আজ বিকেলে সুলতান মিয়া তাঁর নাতি ইমরানকে খুঁজতে আসেন। এ সময় বাড়ির পরিত্যক্ত ঘর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে সেখানে গিয়ে ইমরানের মরদেহ দেখতে পান। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে কাশেমকে আটক করে থানা পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ও পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাশেমকে আটক করে এবং তাঁর (কাশেম) স্বীকারোক্তিতে পাশের ফিশারি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাঁচি উদ্ধার করে।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, ঘাতককে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে গত ৯ মার্চ জেলার কটিয়াদী পৌরসভা এলাকায় মাদকাসক্ত ছেলের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন মুক্তিযোদ্ধা বাবা এমদাদুল কবীর (৬৫)।