হাওরে ডুবেছে একমাত্র ফসল, বাঁধ সংস্কারের দাবি

Looks like you've blocked notifications!
টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ফসল। ছবি : এনটিভি

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ফসল। নিরুপায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে পানির নিচ থেকে তুলে আনছেন নষ্ট হয়ে যাওয়া আধা-পাকা ধান।

হাওর এলাকা বছরের ছয় মাস পানির নিচে থাকে। এটাই তাদের একমাত্র ফসল। সেই ফসল হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ কৃষকরা। তারা বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।  

গত সপ্তাহে হঠাৎ করে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির পরপরই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় বাড়তে থাকে নদনদীর পানি। এর ফলে দ্রুত তলিয়ে যেতে থাকে নদী তীরবর্তী আধা-পাকা বোরো ফসলের জমি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া হিসাবমতে, এরই মধ্যে পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ১২ হাজার একর জমির বোরো ধান। তবে চাষিদের মতে, তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি। প্রধান তিনটি হাওর উপজেলা ইটনা, মিটামইন ও অষ্টগ্রামেই ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

বছরে ছয় মাস পানির নিচে থাকায় হাওর এলাকার কৃষকদের কাছে একমাত্র বোরো ফসলই জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস। ব্যাংক ছাড়াও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদ নিয়ে কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে বোরো আবাদ করে থাকেন। এ অবস্থায় হঠাৎ করে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় হাহাকার পড়েছে কৃষকদের মধ্যে।

পরিবার-পরিজনের সারা বছরের খাদ্যের জোগানসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের উপায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকদের এখন ঘুম হারাম। তাই বাধ্য হয়ে পানির নিচ থেকে তুলে আনছেন পচে যাওয়া আধা-পাকা ধান। কালচে রঙ ধারণ করা সেই ধান শুকিয়ে যতটুকু পাওয়া যায় তা সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। তবে কৃষকদের দাবি, এত করে সিকি ভাগ ধানও মিলছে না।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন পয়েন্টে নির্মিত প্রতিরক্ষা বাঁধগুলো। এরই মধ্যে অনেক বাঁধে পানির উচ্চতা প্রায় সমান-সমান হয়ে পড়েছে এবং অনেক স্থানে পানি চুইয়ে ভেতরে ঢুকতে শুরু করেছে।

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকির কারণে আরো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন হাওর এলাকার কৃষকরা। এ অবস্থায় কৃষকরা নিজেরাই কোদাল নিয়ে নেমে পড়েছেন বাঁধ মেরামতের কাজে।

এ অবস্থায় টেকসই প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিকল্পনামাফিক ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণসহ নদ-নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে সমস্যার স্থায়ী সমাধান দাবি করেছেন হাওর এলাকার কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে কৃষকদের ফসলহানি হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বাঁধ নির্মাণসহ নদ-নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে প্রতিবছরই কৃষকদের এ ধরনের সমস্যায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটবে।