পায়ে লিখে মাথায় তোলা ফল!

Looks like you've blocked notifications!
দুই হাত অচল। পরীক্ষাকেন্দ্রে পা দিয়ে কলম ধরে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধী আরিফা খাতুন। পুরোনো ছবি : এনটিভি

শারীরিক প্রতিবন্ধীতা বা দরিদ্রতা-কোনোটাই দমাতে পারেনি তাকে। সেই ছোট্টবেলায় আর দশটা শিশুর যেমন হাতেখড়ি হয় ঠিক তেমনটি হয়নি তার ক্ষেত্রে। অন্যরা যখন হাতে পেন্সিল বা কলম ধরে লিখতে শুরু করেছিল তখন সে কলম আঁকড়ে ধরেছিল পা দিয়ে। কারণ তার দুটি হাত অচল ছিল জন্ম থেকেই।

প্রথম শ্রেণিতে সেই যে পায়ে লেখা শুরু সেটা থামেনি আজো। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক। এরপর পায়ে লিখেই সে অংশ নেয় এসএসসি পরীক্ষায়। ফলও আসে তার পক্ষে, সে এবার জিপিএ ৪ দশমিক ১১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে পরিবার, স্কুলসহ প্রতিবেশীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

সে লালমনিরহাট সদর উপজেলার খোড়ারপুল শাহীটারী গ্রামের আব্দুল আলীর মেয়ে আরিফা খাতুন। সে ফুলগাছ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। 

বিদ্যালয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জন্ম থেকেই অচল আরিফার দুটি হাত। তবু পড়াশোনার অদম্য বাসনা নিয়ে সে ভর্তি হয় ব্র্যাক পরিচালিত স্থানীয় একটি স্কুলে। হাত দিয়ে সম্ভব না হওয়ায় পা দিয়েই লেখা শুরু করে। এভাবেই প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হয় লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফুলগাছ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এবার সে মানবিক শাখায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। আর পা দিয়ে লিখেই সে এসএসসিতে ৪ দশমিক ১১ পেয়ে পাস করেছে।

আরিফা খাতুনের শিক্ষকরা জানান, আরিফা বেশ মেধাবী। খুব সহজেই সে যেকোনো পড়া মুখস্ত করতে পারে। আর পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম ধরে অনায়াসে লিখতেও পারে। পা দিয়ে লিখলেও অন্যের হাতের লেখার মতো তা সুন্দর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট আরিফা খাতুন। বাবা আব্দুল আলী তালা-চাবি মেরামত করে সংসার চালান। আর মা মমতাজ বেগম গৃহস্থালীর কাজ করেন। বাবার সামান্য আয়ে সংসারের খরচের পাশাপশি কোনো রকমে জোটে আরিফার লেখাপড়ার খরচ। 

ফুলগাছ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন, ‘প্রতিবন্ধী আরিফা অদম্য ইচ্ছে নিয়েই লেখাপড়া করে এসএসসি পাস করেছে। এখন দেখার বিষয় দরিদ্রতা তার উচ্চ শিক্ষাগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কি না।’

আরিফার বাবা আব্দুল আলী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে পা দিয়ে লিখেই সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে।’

আরিফা খাতুন জানায়, তার দুটি হাত সম্পূর্ণ অচল হলেও সে পা দিয়েই সব কাজ করতে পারে। মা মমতাজ বেগমও তাকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন।

অনুভূতি জানতে চাইলে আরিফা বলে, ‘আমি খুশি যে এসএসসি পাস করলাম। তবে মনে এখন ভয় যে অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারব কি না। যদিও আরো অনেক লেখাপড়া করার ইচ্ছে রয়েছে আমার।’