কান ধরে ওঠ-বস করার সময় পড়ে যান প্রধান শিক্ষক!
নারায়ণগঞ্জে সংসদ সদস্যের (এমপি) উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠ-বস করানোর ঘটনায় দেশজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। এরই মধ্যে ঘটনাটির একটি ভিডিও এসেছে এনটিভি অনলাইনের কাছে। যাতে দেখা গেছে, এমপি এবং হাজারো জনতার সামনে কান ধরে ওঠ-বস করতে গিয়ে পড়ে যান প্রধান শিক্ষক।
কিন্তু এরপরও শেষ হয়নি শাস্তির পালা। কয়েকজন মিলে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে দাঁড় করিয়ে দেন। এরপর স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান দুই হাত জোড় করে ওই শিক্ষককে দেখান কীভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। এমপির নির্দেশমতো সমবেত জনতার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চান শ্যামল কান্তি। এ সময় জনতাকে হর্ষধ্বনি দিতে শোনা যায়।
এরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতাকে সেলিম ওসমান বলেন, ‘এইবার আমার কথা শোনো। ওকে থানায় নিয়ে যাবে। রাস্তায় কেউ কোনো অসুবিধা করবে না। যার যারমতো তোমরা বাড়ি যাও।’ এ কথা বলে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান সংসদ সদস্য। এ অনেককে ‘ঠিক আছে, ওকে..ওকে’ বলে হাততালি দিতে দেখা যায়।
প্রধান শিক্ষকের এই ‘সাজা’ অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে গতকাল শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে এর আগে উত্তেজিত একদল লোক মারধর করে। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ আনা হয়েছিল।
এরপর স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান এসে ওই স্কুলশিক্ষককে জনতার সামনে কান ধরে ওঠ-বস করিয়ে সাজা দিয়ে পুলিশ হেফাজতে পাঠান। পরে বার্তা সংস্থা বিবিসির কাছে ঘটনাটি স্বীকার করে এমপি জানান, তাঁর উপস্থিতেই এই শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-বস করিয়ে সাজা দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, জনরোষ থেকে এই শিক্ষককে বাঁচাতে এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
তবে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত তাঁর ওপর নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি দাবি করেন, স্কুলের পরিচালনা কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাঁর ওপর এই নির্যাতন চালানো হয়।
শিক্ষক শ্যামল কান্তির অভিযোগ, ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় জনতাকে ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছিল।
প্রধান শিক্ষক জানান, কিছুদিন আগে তিনি স্কুলের এক ছাত্রকে সাজা দিতে গিয়ে মারধর করেছিলেন। পরিচালনা কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে সেই ঘটনাটিকে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। বলা হয়, এই ছাত্রকে মারার সময় তিনি ধর্ম সম্পর্কে কটু কথা বলেছেন, যা একেবারেই মিথ্যা বলেও দাবি করেন ওই শিক্ষক।
এদিকে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম জানিয়েছেন, স্থানীয় জনতার রোষের হাত থেকে ওই শিক্ষককে বাঁচাতে পুলিশ তাঁকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিতে বাধ্য হয়েছে।