তরুণ উদ্যোক্তা

ফ্রিল্যান্সার থেকে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার

Looks like you've blocked notifications!

অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের বিশ্বব্যাপী আন্দোলন টেইক ব্যাক দ্য টেক। এই আন্দোলনে বাংলাদেশের জন্য লগোর ডিজাইন করেছে দেশেরই প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ কিটেন। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনের কাজ করছেন তারা। এই তালিকায় আছে নাসা, জিই, ওরাকলসহ অনেকেই। তরুণ উদ্যোক্তা এমরাজিনা ইসলাম খানের পরিশ্রমে কয়েকজন নারী ডিজাইনার নিয়েই এগিয়ে চলছে ক্রিয়েটিভ কিটেন। 

এমরাজিনা ইসলামের শুরুটা হয়েছিল ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে। কাজ করতেন ডিজাইনার হিসেবে। পথচলার শুরু হয় একাই। ওই সময় এমনও হয়েছে দিনে ১৭ ঘণ্টার ওপরে কাজ করেছেন। প্রায় তিন বছর একা কাজ করার পর সাহস করে একজনকে নিয়ে ছোট টিম বানান। সেই টিমে আজ সদস্যসংখ্যা ১০। আর একজন ফ্রিল্যান্সার পরিচয় থেকে এমরাজিনা এখন অনলাইনভিত্তিক ডিজাইন ফার্ম ক্রিয়েটিভ কিটেনের কর্ণধার। 

২০১১ সালে রাজধানীর সিটি কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) পাস করেন এমরাজিনা। পড়াশোনার বিষয় সাহিত্য হলেও ডিজাইনে বেশ আগ্রহ ছিল। তাই সিটি কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে সম্পন্ন করেন চারু ও কারুকলা বিষয়ে পাঁচ বছরের সার্টিফিকেট কোর্স। 

গ্রাফিক ডিজাইনকে উদ্যোগ হিসেবে নেওয়ার কারণ হিসেবে এমরাজিনা বলেন, ‘নিজেই যেহেতু ডিজাইনার ছিলাম, তাই ডিজাইন ফার্ম করার আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই।’ 

প্রথমে একা শুরু করলেও ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে শক্তিশালী একটি দল। এমরাজিনার মতে, দশে মিলে কাজ করলে কাজে আনন্দও বেড়ে যায় বহুগুণে। 

নিজের প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ কিটেন সম্পর্কে এমরাজিনা বলেন, তিনি নিজেই মূলত পুরো টিমের কাজ দেখাশোনা করেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কয়েকজন পূর্ণকালীন, বাকিরা খণ্ডকালীন। ক্রিয়েটিভ কিটেনের সব ক্লায়েন্টই যুক্তরাষ্ট্রের। তাই ওই দেশের সময় মেনে প্রতিষ্ঠানটির কাজ চলে সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত। আর প্রতিষ্ঠানটির সব কর্মীকেই অফিসে এসেই কাজ করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কেউ চাইলে বাসায় বসেও কাজ করতে পারেন। পরে সম্পন্নকৃত কাজটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে অফিসে বা যুক্তরাষ্ট্রের ক্লায়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া যায়। 

প্রতিটি উদ্যোগেই কোনো না কোনো বাঁধা থাকে। এমরাজিনার ক্রিয়েটিভ কিটেনের পথেও অনেক বাধা ছিল। শুরুতেই সমস্যা দেখা দেয় দক্ষ এবং পেশাদার কর্মী নিয়ে। এমরাজিনা বলেন, ‘আমার কাজ ডিজাইনারদের নিয়ে। মূলত নারীদের সঙ্গে নিয়ে আমি কাজ করি। সে রকম দক্ষ টিম মেম্বার পাওয়া শুরুতে বেশ কঠিন ছিল। আমাদের দেশের নারীদের জন্য আইটি এবং ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ থাকলে হয়তো এমন সমস্যায় পড়তে হতো না। এ ছাড়া ছোট অফিস স্পেস পাওয়া, হাইস্পিড এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সুবিধা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয়। এখনো কিছু সমস্যা রয়েই গেছে।’

এমরাজিনা তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড পান। আর ক্রিয়েটিভ কিটেন উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে চলতি মাসে ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ গ্রুপের পক্ষ থেকে তিনি পেয়েছেন নবীন উদ্যোক্তা স্মারক-২০১৪। 

নিজের ও প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য প্রসঙ্গে এমরাজিনা বলেন, আপাতত তিনি দলের সদস্যদের আরো দক্ষ করে তুলতে চান। তিনি বলেন, ‘আমি সদস্যদের এমনভাবে গড়ে তুলছি যেন একসময় তারা আমাকে ছাড়াই কাজ করতে পারে।’ আইটিতে দক্ষ ও পেশাদার আরো নারী গড়ে তোলাও তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। 

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সরাসরি তেমন কোনো সহায়তা আশা করেন না এমরাজিনা। তবে দক্ষ নারী আইটি পেশাজীবী তৈরি করা নিয়ে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে আরো কাজ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। এই ক্ষেত্রে তিনি নিজেও সহযোগিতা করতে পারবেন বলে মনে করেন এমরাজিনা।