ময়মনসিংহের দুই আসনে উপনির্বাচন সোমবার
ময়মনসিংহে দুটি আসনে উপনির্বাচন আগামী সোমবার (১৮ জুলাই)। এ নির্বাচনকে ঘিরে আসন দুটির আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারে বাধাসহ বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দাবি, অভিযোগ সত্য নয়।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য (এমপি) সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন অব মজিবুর রহমান ফকির মারা যান, গত ২ মে। এর নয়দিন পর ১১ মে মারা যান হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া থেকে নির্বাচিত এমপি সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। এতে আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করে ১৮ জুলাই ভোটগ্রহণের কথা জানায় নির্বাচন কমিশন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের পোস্টার ও প্রচার দৃশ্যমান হলেও অন্য প্রার্থীদের পোস্টার হাতে গোনা। এ নির্বাচনেও সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হোক। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে প্রার্থী ও ভোটারদের মঝে।
হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, তাঁকে প্রচার চালাতে দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা। তাঁর কর্মীদের প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে, মাইক ভাঙচুর ও মোবাইল কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হতে দিতে চান না আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ভোটের দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখতে হবে।
গৌরীপুরের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফেজ আজিজুল হক অভিযোগ করে বলেন, প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভোটের দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রয়োজন।
তবে গৌরীপুরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাজিম উদ্দিনের দাবি অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বলেন, বিরোধী প্রার্থীদের কেউ জঙ্গি অর্থে নির্বাচন করছেন। তাঁদের লোকবল নেই, সমর্থক বা কর্মী নেই তাই প্রচারও নেই। তাঁরা জ প্রত্যাখ্যাত।
হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ার আওয়ামী লীগের প্রার্থী জুয়েল আরেংও একই কথা বলেন।
হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া আসনে আওয়ামী লীগের বিপরীতে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
আদালতের রায় নিয়ে গতকাল শুক্রবার থেকে মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোহরাব উদ্দিন।
গৌরীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফেজ আজিজুল হক, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রবীণ নেতা আবদুল মতিন, জাতীয় পার্টির সামসুজ্জামান খান ও ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবু তাহের খানসহ চারজনের সঙ্গে লড়বেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
উপনির্বাচন হলেও নির্বাচনী প্রস্তুতি আগের মতোই রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট এলাকার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা আবু তাহের খানকে ইঙ্গিত করে গৌরীপুরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, মিনার মার্কার লোকজন তো আগে থেকেই জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িত।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সামসুজ্জামান খান সম্পর্কে নাজিম বলেন, ‘তিনি তো জঙ্গি অর্থায়নে নির্বাচন করছেন। এর আগে পাঁচবার চেয়ারম্যান, একবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করে ফেল করছেন তিনি।’
গৌরীপুর জাতীয় পার্টির সভাপতি সামসুজ্জামান খান বলেন, ‘তিনি শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য। নাজিম উদ্দিন সাহেব একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের কথা আশা করি নাই। নির্বাচনের কারণে তিনি আমার ইমেজ নষ্ট করার জন্য এসব কথা বলছেন।’
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রবীণ নেতা আবদুল মতিনের জনসমর্থন নেই বলে দাবি করেন নাজিম উদ্দিন।
জুয়েল আরেং বলেন, ‘আমার আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী যাতে বিরক্ত না হন এ জন্য দল থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে কেউ বিরক্ত করেছে বলে আমার জানা নেই।’
ময়মনসিং-৩, গৌরীপুর আসনে দুই লাখ ২৬ হাজার ২৩৫ ভোট। মহিলা ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৩৪৩ জন।
ময়মনসিংহ-১, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া আসনে ভোটার তিন লাখ ৬২ হাজার ৬৯৪ ভোট। মহিলা ভোটার এক লাখ ৯১ হাজার ৭২ ভোট।
ময়মনসিংহের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ করতে হয়। সে অনুযায়ী, আজ শনিবার রাত ১২টার মধ্যেই প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার শেষ করতে হবে।