পৌরসভার নির্বাচন ঘিরে প্রচারণায় মুখর বেড়া
বেড়া পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় প্রতিটি নেতা-কর্মী মাঠে নেমেছেন। জেলা পর্যায়ের নেতাসহ দেশের বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররাও নৌকার পক্ষে এসে ভোট চাইছেন। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রচারণায় মুখর বেড়া পৌরসভা।
কিন্তু এর ঠিক উল্টো অবস্থা বিএনপির প্রার্থীসহ অপর দুই প্রার্থীর ক্ষেত্রে। মেয়র পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে খুব একটা মাঠে দেখা যাচ্ছে না নেতা-কর্মীদের। বেশির ভাগ নেতা-কর্মী রয়েছেন চুপচাপ। এমনকি পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদেরও প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অপর প্রার্থীর পক্ষেও প্রচার-প্রচারণায় নেই তেমন সাড়া।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায় আগামী ৭ আগস্ট বেড়া পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন,কাউন্সিলর পদে ৬২ জন ও মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আব্দুল বাতেন।
বিএনপির প্রার্থী হিসেবে পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান মোল্লা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ডা. এস এম আব্দুল আউয়াল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়,বেড়ায় আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দেয় ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে। ওই সময় সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে বাদ দিয়ে শামসুল হক টুকুকে সংসদ নির্বাচনে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এতে আবু সাইয়িদের অনুসারীরা আওয়ামী লীগে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনেও পাবনা-১ আসনে মনোনয়ন পান শামসুল হক টুকু। ওই নির্বাচনে আবু সাইয়িদ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তালা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। এর পর থেকে আবু সাইয়িদের অনুসারীরা আবারও নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।
এদিকে ২৭ জুন বেড়া পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মোট সাতজন তদ্বির করেন। ওই সাতজনের মধ্যে তিনজন ছিলেন আবু সাইয়িদের অনুসারী। শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই ও বর্তমান মেয়র আলহাজ আব্দুল বাতেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় বাকি ছয়জনের মধ্য থেকে পাঁচজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও আবু সাইয়িদের ভাগ্নে ডা. এস এম আব্দুল আউয়াল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (নারিকেল গাছ মার্কা) নির্বাচনে প্রার্থী হন।
গত ২৩ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু হতেই পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট। আবু সাইয়িদের অনুসারী বলে পরিচিত আওয়ামী লীগের যেসব নেতা-কর্মী এত দিন নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিলেন তাঁরা আওয়ামী লীগে সক্রিয় হয়ে নৌকা মার্কার প্রচারণায় সরব হয়ে ওঠেন। এর ফলে বিভক্তি দূর হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।
বেড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন,‘গত দুটি সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগে যে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল এবারের মেয়র নির্বাচনে তার অবসান হয়েছে। দলের প্রতিটি নেতাকর্মী নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন।’
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই নন,বেড়া পৌর এলাকার পাঁচ থেকে ছয়টি সামাজিক সংগঠনের সদস্যরাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল বাতেন মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ম্যাব) সভাপতি পদে থাকায় বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররাও তাঁর পক্ষে এসে ভোট চাইছেন।
এদিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেখানে চাঙা হয়ে উঠেছে সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। নৌকার পক্ষে জমজমাট প্রচারণার বিপরীতে অনেকটাই নিষ্প্রাণ প্রচারণা চলছে ধানের শীষের। বিএনপির পৌর, উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের নেতাদের নির্বাচনী মাঠে প্রায় দেখাই যাচ্ছে না।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইজউদ্দিন বলেন,‘আমাদের নেতাকর্মীদের অব্যাহত ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। এর ফলে অনেকেই মাঠে নামার সাহস পাচ্ছে না। আমাদের আশঙ্কা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আউয়ালের নির্বাচনী প্রচারণায়ও নেই তেমন জোড়। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে তাঁর সমঝোতা হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁর সমর্থকরা। তবে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
আওয়ামী লীগ মনোনীত আব্দুল বাতেন বলেন, তিনি ১৭ বছর ধরে বেড়া পৌরবাসীর সেবা করে আসছেন। এখানকার মানুষ শান্তিতে আছে। কোনো চুরি-ডাকাতি নেই। আওয়ামী লীগের পাশপাশি বিএনপি-জামায়াতের ভোটও তিনি পাবেন বলে জানান।
বিএনপি মনোনীত আলহাজ আব্দুল মান্নান মোল্লা বলেন, মানুষ একজনের শাসনের অবসান চায়। তাই সুষ্ঠু ভোট হলে তিনিই বিজয়ী হবেন বলে আশা করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদের ভাগ্নে ইউরোলজি ডা. এসএম আব্দুল আওয়াল বলেন, বেড়ার মানুষকে দানবের হাত থেকে মুক্তি দিতে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রার্থী হয়েছেন। জনগণ তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক জানান,‘বেড়া পৌরসভায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’