আসল নায়ক সোয়াত : মনিরুল
রাজধানীর কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সোয়াত সদস্যরাই ‘প্রকৃত সুপার হিরোর’ ভূমিকা পালন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিটপ্রধান মনিরুল ইসলাম। একইসঙ্গে তিনি বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটকে অভিহিত করেছেন ‘পার্শ্বনায়ক’ হিসেবে।
সিটিটিসি ইউনিটপ্রধান বলেছেন, ‘আমাদের ইউনিটের সোয়াত সদস্যরা যেভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও কর্তব্য পালনে দৃঢ়তার পরিচয় দেন, তখন গর্বিত হই! আমাদের বোম ডিসপোজাল ইউনিট সদস্যরা যখন আনইউজয়াল গ্রেনেড কিংবা বোমা নিষ্ক্রিয় করেন, দূর থেকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি ছেলেগুলোর কি জীবনের মায়া নেই!’
‘আমি কল্যাণপুর আর পাইকপাড়া অভিযানের আসল নায়ক, প্রকৃত সুপারহিরো সোয়াত টিম আর পার্শ্বনায়ক বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে তাদের অদম্য সাহসিকতা আর রণকৌশলের জন্য প্রাণঢালা অভিন্ন্দন জানাতে চাই!’, যোগ করেন মনিরুল।
সোমবার দিবাগত গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেকবুকে এক স্ট্যাটাসে মনিরুল ইসলাম এসব মন্তব্য করেন।
গত ২৭ আগস্ট (শনিবার) সকালে নারায়ণগঞ্জ সদরের পাইকপাড়ায় দেওয়ানবাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় আইনশঙ্খলা বাহিনী। এ অভিযানের নাম ছিল ‘হিট স্ট্রং টোয়েন্টি সেভেন’। অভিযানে রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া হামলার ‘পরিকল্পনাকারী ও জোগানদাতা’ তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত হন। এ অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াতের সদস্যরা।
এ ঘটনার এক মাস আগে ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডে ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামে পরিচিত সাততলা একটি ভবনে অভিযান চালায় পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াত। এতে নয় জঙ্গি নিহত হয়, একজনকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়। এই অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’। এখানে নিহতরা হলেন হলেন রবিন, অভি, আতিক, সাব্বির, সোহান, ইমরান, তাপস ও ইকবাল।
এ দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমার মনে হয়, কল্যাণপুরের ‘তাজ মঞ্জিল’ এর মত এত ঘিঞ্জি এলাকার পোড়ো বাড়ির পাঁচ তলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যকোনো দেশের কমান্ডোরা এত দ্রুত সফল অভিযান করতে পারতো না। অন্য অনেক দেশের এই ধরনের হামলা মোকাবিলার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, কতটা ঝুঁকি এই ছেলেগুলো নিয়েছে। পাইকপাড়ায় অভিযানে অন্যদেশের কমান্ডো আনলে তারা পুরো এলাকা খালি করে হেলিকপ্টার নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহড়া দিয়ে, পুরো এলাকার পানি বিদ্যুৎ বন্ধ করে কী এলাহী কাণ্ডটাই না করতো। কিন্তু সোয়াতের সদস্যরা নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে কিভাবে অটোমেটিক রাইফেল আর গ্রেনেডের সামনে তিনতলায় অপারেশন করলো ভাবলে হৃদকম্পন হয়!’
প্রায় ২১ বছর ধরে পুলিশের চাকরি করা, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত বছর গোয়েন্দা (ডিবি) এবং কাউন্টার টেরোরিজমের কাজে থাকা সিটিটিসি ইউনিটপ্রধান আরো বলেন, ‘সিনিয়র কর্মকর্তা হওয়াটা একটা প্রিভিলেজ বটে! এতোটা ঝুঁকি নিতে হয় না! এসি গাড়িতে চড়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। বুঝে কিংবা না বুঝে অনেক দূরে সম্পূর্ণ নিরাপদ জায়গায় বুলেট প্রুফ জ্যাকেট আর হেলমেট পড়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করি! ক্যামেরায় আমার ছবি যায়, সবাই মনে করে আমি নায়ক, কিন্তু আসল নায়করা অন্তরালেই থেকে যায়।’