জুম্ম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় আমৃত্যু এক সংগ্রামী এম এন লারমা
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম এন লারমা) ছিলেন জুম্ম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় আমৃত্যু এক সংগ্রামী। আজ বৃহস্পতিবার রাঙামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এম এন লারমার ৭৭তম জন্মদিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
সন্তু লারমা বলেন, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নিজের জীবন শুরু করেছিলেন, আমৃত্যু সেই আদর্শ ও লক্ষ্যই লালন করেছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তিনি। তিনি জুম্ম জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষি জাতিদের মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য ঐক্য ও সংহতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তিনি জুম্ম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য লড়াই সংগ্রাম করে যাওয়ার স্বপ্নের শুরু করেছিলেন তিনি।
জন্মদিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ছাড়াও পুরস্কার বিতরণী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, এম এন লারমা ফাউন্ডেশন-এর আহ্বায়ক বিজয় কেতন চাকমা, মাধবীলতা চাকমা, আনন্দ জ্যোতি চাকমা প্রমুখ।
এম এন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশন ও স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা একজন মহান নেতা ছিলেন। তিনি শুধু পাহাড়িদের নেতা ছিলেন না, সারা দেশের মেহনতি মানুষেরও নেতা ছিলেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর কীর্তি শুধুমাত্র আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, তার আদর্শকে বুকে ধারণ করতে হবে এবং আমাদেরকে তাঁর মতো অসাম্প্রদায়িক হতে হবে।’
জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেত্রী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য মাধবীলতা চাকমা বলেন, এ অঞ্চলে নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিলেন প্রিয় নেতা এম এন লারমা। তিনি বলতেন, নারীরা ঘরে বসে থাকলে চলবে না তাদেরও আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে, অন্যথায় জাতি এগিয়ে যেতে পারবে না। নারীরা ঘরে বসে থাকার জন্য জন্মায়নি, তাদেরও জাতিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, ‘এম এন লারমা আদর্শ বা আন্দোলন করার সাহস পরিবার থেকেই পেয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষা ছাড়া মুক্তি হবে না, তাই তিনি গ্রামে চলো কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন।’
আলোচনা সভা শেষে এম এন লারমা জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।