এবার আজহারের মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের মধ্যে এখন আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও মাওলানা আব্দুস সোবহানের মামলা।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিল করার তালিকা অনুযায়ী এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলাটি আগে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপিল করার পর আদালত নির্ধারণ করে দেন কোন মামলার কবে শুনানি হবে। তবে কার্যতালিকায় আসলে আমরা এসব অপরাধীর মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত রয়েছি। যত দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা যায় সে বিষয়ে আমরা আদালতের কাছে আবেদন জানাবো।’
প্রধান বিচারপতি মামলা শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আনার নির্দেশ দিলে শুনানি শুরু হবে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান।
সম্প্রতি মীর কাসেম আলীর মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর ১০ সেপ্টেম্বর তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। জামায়াত নেতাদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
এ ছাড়া মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিভিউ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া গোলাম আযমের আপিল নিষ্পত্তির আগে তিনি কারাগারে মৃত্যুবরণ করায় তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মধ্যে এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলাটি প্রথমে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায়। এর পরে রয়েছে মাওলানা আব্দুস সোবহানের আপিল মামলা।
এ টি এম আজহারের মামলার বিবরণ
২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি খালাস চেয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। আপিলে খালাসের পক্ষে তিনি ১১৩টি যুক্তি তুলে ধরেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন এই আপিল দায়ের করেন। আপিল নম্বর ১২/২০১৫।
এ টি এম আজহারুল ইসলামের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আপিল আবেদনে ৯০ পৃষ্ঠার সঙ্গে ১১৩টি গ্রাউন্ডসহ মোট দুই হাজার ৩৪০ পৃষ্ঠার আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসলে আমরা শুনানিতে অংশগ্রহণ করবো।
শাহজাহান আরো বলেন, ২৬ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি অনুযায়ী, এ টি এম আজাহারের বিরুদ্ধে আনা হত্যা, গণহত্যার অভিযোগগুলো প্রমাণ করতে প্রসিকিউশনের আইনজীবীরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। প্রসিকিউশনের ৪ ও ২৫ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি অনুযায়ী ডকুমেন্ট তৈরি করে তারা (প্রসিকিউশন) নিজেদের মতো করে মামলা সাজিয়েছে। আশা করি, আপিল বিভাগে আজহারুল ইসলাম খালাস পাবেন এবং ন্যায়বিচার পাবেন।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
রায়ে আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ মোট ছয়টি অভিযোগ তুলে ধরে প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। ৫ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর জেল ও ৬ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের জেল দেওয়া হয় তাঁকে। আর ১ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
২০১২ সালের ২২ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের আদেশে রাজধানীর মগবাজারের নিজ বাসা থেকে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।