ভয় কিছুটা কাটলেও দুশ্চিন্তা আছে কূটনীতিকদের

জঙ্গি হামলার ভয় অনেকটাই কেটেছে; তবে দুশ্চিন্তা এখনো পিছু ছাড়ছে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা।
কূটনীতিকদের নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডাকা বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। জঙ্গি হামলা নিয়ে কূটনীতিকদের এমন দুশ্চিন্তার ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, বিশ্বের কোথাও মানুষ এখন আর জঙ্গিবাদের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত নয়।
গত ১ জুলাই রাত ৯টার দিকে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলার পর রাতেই তারা ২০ জনকে হত্যা করে। ওই রাতে উদ্ধার অভিযানের সময় জঙ্গিদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে।
এ ঘটনার পর তিন মাসেরও বেশি সময় কেটে গেছে। এই তিন মাসে ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা কেমন ছিলেন? তারা কি জঙ্গি হামলার ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন?
এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন। কেননা কূটনীতিকরা তাঁর এলাকার বাসিন্দা। বিদেশি এসব বাসিন্দারা বললেন, ভয় পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার জন্য তিন মাস সময় যথেষ্ট নয়, আরো সময় দরকার।
অনুষ্ঠানে সুইডিশ রাষ্ট্রদূত জয়ান ইউহান বলেন, ‘তিন মাস কেটে গেছে। আমি বলব, ভালো তিন মাস কেটে গেছে। কেননা এই সময়ের মধ্যে জঙ্গি হামলার ঘটনা একটিও ঘটেনি। তবে এই তিন মাসের মতো যদি ছয় মাস, নয় মাস, ১২ মাস কাটে তবে আমরা নিজেদের বেশি নিরাপদ মনে করব। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছি, জঙ্গি হামলার পর যে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা যেন অব্যাহত থাকে। তবেই আমরা সত্যিকারের ভালো অনুভব করব।’
সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘তিনি বলছিলেন যে, আমাদের কনফিডেন্স অনেক বেড়েছে, আমাদের নির্ভয়তা অনেক বেড়েছে কিন্তু একইভাবে আমরা সচকিত। আমাদের যে পারসেপশান, ভয়ের ফিলিংস, সেটাকে দূর করতে হবে। আমরা বলেছি যে, পৃথিবীর কোনো জায়গায় এখন ভয়ের ফিলিংস নেই। পৃথিবীর কোনো দেশ এই নিরাপত্তা দিতে পারবে যে, আপনার কিছু হবে না?
আর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটের মতে, নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া মানেই নতুন করে জঙ্গিদের সুযোগ করে দেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যি কৃতজ্ঞ। সত্যি খুশি যে, নিরাপত্তাব্যবস্থা বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে। কিন্তু তারপরও আমি বলব না যে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। পুরোপুরি সন্তুষ্ট হওয়া মানেই একধরনের স্বস্তির মধ্যে থাকা। আর স্বস্তিতে থাকা মানেই সন্ত্রাসবাদকে নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘আমার পরামর্শ এটাই থাকবে সব জাতি মিলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করা। কেননা এসব সন্ত্রাসীর কার্যক্রমের কোনো সীমানা থাকে না। আপনাদের প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি নিউইয়র্কে এই কথাই বলেছেন।’
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে ৭ জুলাইয়ের পরে বড় আকারের কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। এটি অবশ্যই একটি সফলতা। কিন্তু এই সফলতার কারণে আমরা বা সরকার কেউ আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। এবং আমরা কখনোই ভুগব না।’
কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আরো স্মার্ট সিকিউরিটির কথা বলা হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘কূটনীতিকরা যে কোয়ালিটি সিকিউরিটির কথা তুলেছেন, যেমন আমাদের সিকিউরিটি ইকুইমেন্ট, কেয়ার- এসব মিলিয়ে যেন তা স্মার্ট হয়। এটি আমাদের নলেজে আছে।’
দেশের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নিয়ে কূটনীতিদের সঙ্গে নানা বিষয়ে মতবিনিময় করেন।