রাঙামাটিতে এসএসসির ফরম পূরণে বাড়তি টাকা আদায়
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফরম পূরণে বোর্ড নির্দেশিত ফির চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে রাঙামাটি শহরের স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে ৪০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ফি নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে ফরম পূরণ করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে।
ফরম পূরণ শেষ হয়ে গেলেও এই বর্ধিত ফি আদায়ের ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকসহ সচেতন মহল। তবে সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তায় এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না অভিভাবকরা। আগামী বছর ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এই বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য এক হাজার ৬৪৫ ও অনিয়মিতদের জন্য এক হাজার ৭৪৫ টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য নিয়মিতদের এক হাজার ৭৮৫ ও অনিয়মিতদের এক হাজার ৮৯৫ টাকা ফরম ফিলাপের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু রাঙামাটির একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কিংবা মাদ্রাসায়ও বোর্ড নির্দেশিত এই হারে টাকা নেয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ নানান খাতের কথা উল্লেখ করে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
রাঙামাটি শহরের আল-আমিন মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষার জন্য মানবিক শাখায় ফরম পূরণের জন্য নেওয়া হচ্ছে দুই ৪০০ টাকা, বিজ্ঞান শাখায় দুই হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া কোচিং ফি বাবদ নেওয়া হচ্ছে বাড়তি এক হাজার টাকা করে।
শহীদ আবদুল আলী একাডেমিতে নেওয়া হয়েছে মানবিকে দুই হাজার ৮০০ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষায় দুই হাজার ৮০০ টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগে দুই হাজার ৮৯০ টাকা। বায়তুল শরফ মাদ্রাসাতে কোচিং ফিসহ নেওয়া হয়েছে চার হাজার টাকা। রাঙামাটি সিনিয়র মাদ্রাসাতে কোচিং ফিসহ নেওয়া হয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা। যারা টেস্ট পরীক্ষায় খারাপ করেছে তাদের থেকে বাড়তি ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
মুজাদ্দেদ-ই-আলফেসানী একাডেমিতে মানবিক শাখায় দুই হাজার ৬০০ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষায় দুই হাজার ৬০০ টাকা, বিজ্ঞান বিভাগে দুই হাজার ৬৯০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে মানবিকে দুই হাজার ৬৯৫ টাকা, বিজ্ঞানে দুই হাজার ৭৮০ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষায় দুই হাজার ৬৯৫ টাকা। ভেদভেদী পৌর জুনিয়র হাই স্কুলে মানবিক শাখায় দুই হাজার ৪১৫ টাকা, বিজ্ঞানে দুই হাজার ৫০৫ টাকা, ব্যসসায় শিক্ষায় দুই হাজার ৫০৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ঐতিহ্যবাহী শাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এই স্কুলে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে তিন হাজার ৭৫০ টাকা, মানবিকে তিন হাজার ৭৫০ টাকা, বিজ্ঞান বিভাগে তিন হাজার ৮৪০ টাকা নেওয়া হয়েছে। রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যবসা শিক্ষায় দুই হাজার ১৩০ টাকা, বিজ্ঞান শাখায় দুই হাজার ৩৩০ টাকা এবং রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শাখায় এক হাজার ৮৮৫ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষায় এক হাজার ৮২৫ টাকা, মানবিকে এক হাজার ৮২৫ টাকা নেওয়া হয়েছে।
রাঙামাটির একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তারা শুধু বোর্ড থেকে নির্ধারিত ফরম ফি নিচ্ছেন। একটাকাও বেশি নিচ্ছেন না। ফরম পূরণের ফির সঙ্গে স্কুলের মাসিক বেতন, কোচিং ফির টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।
শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বোর্ড নির্ধারিত ফি নিচ্ছি, এর সঙ্গে কেন্দ্র ফি বাবদ ৩০০ টাকাসহ অন্য টাকাগুলো হচ্ছে স্কুলের দুই মাসের বেতন এবং অন্যান্য খরচ।’
সব টাকা একসঙ্গে পৃথক রশিদেই নেওয়া হচ্ছে দাবি করে মজিবুর রহমান বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তেই স্কুলের বিভিন্ন তহবিলের জন্য অর্থ নেওয়া হয়।
রাঙামাটি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশীদ সরকার বলেন, বোর্ড থেকে কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তা আমরা জানি না। এ ধরনের কোনো নোটিশ অফিসিয়ালি আমাদের কাছে আসেনি। এ ছাড়া রাঙামাটি কোন স্কুল কত টাকা করে নিচ্ছে তাও আমরা জানি না। বোর্ডের সঙ্গে স্কুলগুলো সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এই ফরম পূরণ করে থাকে।
শিক্ষা কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা যদি কোনো লিখিত অভিযোগ পাই তবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুবু হাসান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের নিয়মিতদের জন্য এক হাজার ৬৯৫ টাকা, অনিয়মিতদের জন্য এক হাজার ৭৯৫ টাকা, মানবিকের নিয়মিতদের জন্য এক হাজার ৬৯৫ টাকা, অনিয়মিতদের জন্য এক হাজার ৭৯৫ টাকা, বিজ্ঞান বিভাগের নিয়মিতদের জন্য এক হাজার ৭৮৫ টাকা এবং অনিয়মিতদের জন্য এক হাজার ৮৮৫ টাকা। এর চেয়ে বাড়তি টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই বলেও জানান তিনি।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, আমরা বাড়তি টাকা নেওয়ার কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। যদি বোর্ডের নির্ধারিত টাকার থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়, এমন অভিযোগ কেউ করেন, তবে আমরা তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
এরই মধ্যে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে সতর্কীকরণ নোটিস দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তথ্য কর্মকর্তার বরাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা ২০১৭ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণের ক্ষেত্রে শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ শিক্ষার্থীদের নিকট হতে আদায় করছেন, যা সরকারি বিধি-বিধানের পরিপন্থী। অতিরিক্ত আদায়কৃত অর্থ অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় ম্যানেজিং কমিটি বাতিলসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’