তিন ফসলি জমির ওপর রাস্তা নির্মাণ, ১৪৪ ধারা জারি
নওগাঁর রাণীনগরের বড়গাছা ইউনিয়নের চামটা গ্রামে তিন ফসলি জমির ওপর দিয়ে তৈরি হচ্ছে রাস্তা। সেই রাস্তার জন্য আছে জমি দখলের অভিযোগ। হয়েছে সংবাদ সম্মেলন। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতেও। আদালত গত ১৫ মে ওই রাস্তার ওপর জারি করেছেন ১৪৪ ধারা। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাণীনগরের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দিয়েছেন নির্দেশ।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই জমির মালিক বীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে বিথিন্দ্র নাথ সরকার।
সংবাদ সম্মেলন বিথিন বলেন, ‘আমি পেশার তাগিদে ঢাকায় থাকি। চামটা গ্রামের যাতায়াতের জন্য আমার জমির পাশ দিয়ে ১৯৬০ সাল থেকে একটি হাঁটর রাস্তা আছে। সেই রাস্তা সংস্কার না করে গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের চলাচলের জন্য ওই গ্রামের সুবাস সরকার (৩২), সন্তোষ কুমার সরকার (৬০), উত্তম সরকার (৪৩) ও উৎপল সরকার (৩৭), প্রদীপ কুমার বিশ্বাস (৪৭),বিকাশ চন্দ্র সরকার (৪৮) দীর্ঘদিন ধরে আমার চামটা মৌজার আরএস ৩৮১ নং খতিয়ানের ১৬৩৫ দাগের ২১ শতাংশ ধানি জমি দখল করে আরেকটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের ৮ তারিখে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রাস্তা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করার পর ১২ তারিখে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মেরিনা আক্তার প্রকল্প তৈরি করে আমাকে না জানিয়ে আমার আরেকটি তিনফসলি জমির পশ্চিম ও উত্তর দিকের অংশ দখল করে চামটা হরিমন্দির থেকে নতুন করে আরেকটি রাস্তা নির্মাণকাজ শুরু করেন।’
সংবাদ সম্মেলন বিথিন আরও বলেন, ‘ এ বিষয়ে পরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে ওই জমির উপর দিয়ে রাস্তা হবে না মর্মে শতভাগ আশ্বস্ত করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অদৃশ্য কারণে জনপ্রতিনিধিদের অনুমতিতে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করলে আমি তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ রাখার জন্য আদালতের আশ্রয়ে গেলে আদালত থেকে চলতি মাসের ১৫ তারিখ ওই রাস্তার উপর ১৪৪ ধারা জারি করেন। তার পরও তারা সরকারি প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে ওই রাস্তার প্রাথমিক নির্মাণকাজ শেষ করে। পরবর্তী সময়ে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে উপজেলা প্রশাসন, ভূমি অফিস ও পুলিশ প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও আজ পর্যন্ত কোনো ফল পাইনি। আগের সরকারি পুরাতন রাস্তা সংস্কার না করে আমার তিন ফসলি জমি দখল করে নতুন রাস্তা কেন নির্মাণ করা হলো আমি সরকারের কাছে এই অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচারসহ আমার জমি ফেরত চাই।’
অভিযুক্ত মাস্টার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘পুরাতর রাস্তা দিয়ে আমাদের কয়েকটি পরিবারকে অনেক ঘুরে আসতে হয়। এতে প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের। তাই বিথিন্দ্র নাথ সরকারের অনুমতি না নিয়েই সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় তার জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছি। এই রাস্তাটি নির্মাণ হওয়ায় আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। বিথিন্দ্র নাথ যখন এই গ্রামে বসবাস করবে তখন সেও এই রাস্তার উপকারিতা বুঝতে পারবে।’
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মেরিনা আক্তারের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান, গ্রামবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জনস্বার্থে রাস্তাটি ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের আওয়ায় নির্মাণ করা হয়েছে। এতে গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের কষ্টের অবসান হয়েছে। নতুন রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় গ্রামবাসী খুশি হয়েছে।
বড়গাছা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মাস্টার বলেন গ্রামবাসীর চাহিদার ভিত্তিতে ও উপর মহলের সুপারিশ থাকায় ওই রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প দেওয়া হয় সংরক্ষিত ইউপি সদস্যকে। পরে প্রয়োজন হলে আগের পুরাতন রাস্তাটিও সংস্কার করা হবে। তবে জমির মালিকের অনুমতি ছাড়া তার জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হুসেইন বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি বিথিন্দ্র নাথ সরকারের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুই পক্ষকে ডেকে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পদক্ষেপ নিব।’