রাজউকের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি
রাজধানীর ডেমরা এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন। স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হয়ে তাদের কাছে দাবি করেন আপনাদের রাজউকের অনুমোদনে সমস্যা আছে। আপনাদের বিরুদ্ধে নিউজ করবো। এক পর্যায়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ওই সাংবাদিক পরিচয়ধারীরা। কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র ঠিক আছে মর্মে দেখানোর পর বলা হয়, আপনারা টাকা দিয়ে অনুমোদন নিয়েছেন। তাই চাঁদা না দিলে সমস্যা হবে। এভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও জায়গা ক্রয়ের সময় চাঁদা দাবি করছে কিছু স্থানীয় সাংবাদিক পরিচয়ধারী। সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নাম ভাঙিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজউক সূত্র জানায়, কিছু কিছু তথাকথিত নামসর্বস্ব পত্রিকা ও ভূঁইফোড় অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও এসব অভিযোগ উঠেছে। মূলত নির্মাণাধীন বাড়ি ঘিরে এই সিন্ডিকেট সক্রিয়। প্রথমেই তারা খুঁজে বের করেন কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি নির্মাণাধীন তিন-চারতলা বাড়ি রয়েছে। এরপর তাদের টার্গেট করে চাঁদাবাজির চেষ্টা চালান তারা। কোথাও সফল না হলে উল্টো নিউজ করবে বলে হুমকিও দিয়ে আসে চক্রটি। যারা এরকম উটকো ঝামেলায় পড়তে চান না তারা যাচাই-বাছাই না করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দ্রুত নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের টাকা দিয়ে দেন। এসব ঘটনায় ম্লান হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকদের সম্মান। এদিকে এই প্রতারকচক্র থেকে নগরবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেছেন রাজউকের কর্মকর্তারা। এরকম প্রতারকচক্রের সন্ধান পেলে দ্রুত পুলিশকে জানাতে বলেছে রাজউক।
সাংবাদিকের ছদ্মবেশে প্রতারক : রাজধানীর গোলাপবাগে নির্মাণাধীন একটি চারতলা ভবনে প্রবেশ করেন দুই ব্যক্তি। জানতে চান বাড়ির মালিক কে? সুপারভাইজার বলেন, ‘কোথা থেকে এসেছেন, কী চান?’ উত্তরে তারা বলেন, ‘আমরা ‘অমুক’ পত্রিকা বা অনলাইন থেকে এসেছি।’ এরপর বাড়ির মালিক এলে তারা তাকে বলেন, ‘আপনার বাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। রাজউকের প্ল্যানকোড অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে না আপনার।’ বাড়িওয়ালা জানতে চান, ‘আপনি বললেন, আপনি সাংবাদিক- তাহলে আপনি রাজউকের পেপারস দেখার কে? আর আপনাদেরই এই অভিযোগ দেবে কেন? অভিযোগ তো দিলে রাজউকে দেবে।’ প্রতি উত্তরে তথাকথিত সেই দুই ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি, আমাদের অফিসে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন।’ এবার সেই বাড়ির মালিক বলেন, ‘রাউজকের কোন অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করব?’এর উত্তরে সেই তথাকথিত সাংবাদিকরা বলেন, ‘না। যোগাযোগ করবেন আমাদের পত্রিকা অফিসে। আমরাই অভিযোগটা সমাধান করে দেব। এটা বলে দুটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যান সেই বাড়িওয়ালার কাছে।’ এরপর যথারীতি সেই বাড়ির মালিক রাজউকের নির্দিষ্ট জোনাল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা জানান, এরকম কোনো অভিযোগ নিয়ে বাড়িতে কেউ আসতে পারে না। সে যেই হোক না কেন, নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও না। এরকম কিছু থাকলে শুধু রাজউকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই যোগাযোগ করবেন বলে পরামর্শ দেন।
জানা গেছে, এ ধরনের ঘটনা শুধু গোলাপবাগে নয়, সূত্রাপুর, বংশালসহ পুরো ঢাকা শহরেই ঘটছে। এদের বিরুদ্ধে রাজউক ইতোমধ্যে অনেক অভিযোগ পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মাঝেমধ্যে ভবন মালিকদের লিখিত এবং মৌখিক এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা তাদের বলেছি প্রতারকচক্রকে পুলিশে দিতে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এরা একটি প্রতারকচক্র। এদের সঙ্গে রাজউকের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়টা নিয়ে নগরবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।’
একই সঙ্গে এরকম প্রতারকচক্রের খোঁজ পেলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে দ্রুত জানাতেও অনুরোধ করেন তিনি।