পাবিপ্রবির লিফট কিনতে ২৫ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ যাত্রা

Looks like you've blocked notifications!
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : এনটিভি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) নতুন পাঁচটি ভবনের জন্য ২৫টি লিফট কিনতে ২৫ লাখ টাকা খরচ করে তুরস্কে যাচ্ছে পাবিপ্রবির প্রতিনিধিদল। আগামী ৬ জুন তারা তুরস্কের যাবেন বলে জানা গেছে।

এ খবরে জেলাজুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। অনেকে কর্মকর্তাদের প্রমোদ ভ্রমণ দাবি করে এই সফর বাতিলের দাবি জানিয়েছে। তবে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই এই সফর হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গত ১৫ মে পাবিপ্রবির প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) জি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্মকে জানানো হয়েছে। ও চিঠিতে ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের বিভিন্ন স্থাপনার লিফট সংগ্রহের প্রাক জাহাজীকরণে ছয় সদস্যের একটি পরিদর্শক দলের তুরস্ক ভ্রমণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৯ মে তুরস্ক সফরের কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সম্মান জানিয়ে এই সময় সূচি পিছিয়ে পুনরায় আগামী ৬ জুন করা হয় বলে উপাচার্য জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবিপ্রবির একাডেমিক ভবন, ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হলসহ মোট পাঁচটি আধুনিক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর জন্য কেনা হবে ২৫টি লিফট। আর সেই লিফট কেনাকাটা ও তদারকির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল যাচ্ছে তুরস্কে।

এই সফরের দলনেতা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খানকে। উপদলনেতা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিনকে। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ আহমেদ, উপপ্রকৌশলী (ইইই) মো. রিপন আলী, উপপ্রকৌশলী জহির মোহা. জিয়াউল আবেদীন। সদস্য সচিব হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) জি এম আজিজুর রহমান।

জনগণের অর্থ অপচয় করে এ ধরনের সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। অবিলম্বে এই সফর বাতিলের দাবি জানিয়েছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ বাবু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে গুগলে সার্চ দিলেই সব ধরনের লিফটের ডিজাইন পাওয়া যায়। সারা দেশে বিশাল বিশাল বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০তলা ভবনের লিফটের জন্যও তুরস্ক, জার্মানি, চায়না বা রাশিয়ায় প্রতিনিধিদল যেতে হয়নি। তাহলে পাবিপ্রবির অল্প কয়েকটি লিফট কেনার জন্য কেন ২৫ লাখ টাকা অপচয় করে বিলাসবহুল সফর করতে হবে?’

আব্দুল আহাদ বাবু আরও বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিশাল বিশাল ভবনের জন্যও লিফট কিনতে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। ঠিকাদার কেন ২৫ লাখ টাকা খরচ করে শিক্ষকদের লিফট কেনার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে নিশ্চয় খারাপ ও নিম্নমানের লিফট কিনে আনা হবে। শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান নিয়ে চিন্তা না করে বিদেশ ভ্রমণের নামে ‘প্রমোদ ভ্রমণে’ যাচ্ছেন। এ জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে প্রথম হলেও সেই শিক্ষার্থীকে চাকরি দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের জন্য সব অরাজকতা শুরু হয়েছে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক পাবনার সভাপতি আব্দুল মতীন খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের লিফট কেনার জন্য শিক্ষকদের বিদেশ ভ্রমণ মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। এটা স্পষ্ট অপচয়। ঠিকাদারের খরচে গেলেও এটা অপচয় বলব। ঠিকাদারের তো লিফট বুঝিয়ে দিতেই হবে। তাহলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করানো বাদ দিয়ে শিক্ষকদের লিফটের কারখানা দেখতে যেতে হবে কেন?’

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি পাবনা জেলা শাখার সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা শ্রেফ দুর্নীতি ছাড়া আর কিছুই না।’ 

পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মাত্র ২৫টি লিফট কেনার জন্য ছয় কর্মকর্তাকে বিদেশে যেতে হবে, এমন অপচয় আমি সমর্থন করি না। সামান্য কয়েকটি লিফট দেশে থেকেই ক্রয় করা যায়। এসব কর্মকর্তার ১২ দিন থাকা খাওয়া ব্যয়বহুল হবে। এই বিপুল টাকা অযথা ব্যয় না করে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে খরচ করা উচিত।’

তবে নিয়মের মধ্যে থেকেই এ সফরের আয়োজন করা হয়ছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) জি এম আজিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছয় জনের যে প্রতিনিধিদল তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন তার জন্য সরকারি কোনো অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে না। সফরের এই অর্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বহন করবে। তাই এটা অপচয় নয়।’

অন্যদিকে সফরের দলনেতা প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষ এখন একটি ছোট জিনিস কিনতে গেলেও পরখ করে দেখে। প্রকল্পটি চার বছর আগের। তাই লিফট কিনতে এই সফর। এই সফরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই, আবার সরকারের সংশ্লিষ্টতাও নেই। এটা সম্পূর্ণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যয় করবে।’

পাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সফরের বিষয়টা অনেক আগে থেকেই অনুমোদন করা আছে। ৯ মে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে সফরের তারিখ ৬ জুন করা হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সম্মান করেই এত বিলম্ব করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. খায়রুল হক জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তাদের জানা নেই। তবে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হলে কমিশন বসে থাকবে না।