চা শিল্পে অবদান রাখায় পুরস্কার পেল ৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

Looks like you've blocked notifications!
মৌলভীবাজারে বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় চা দিবস পুরস্কার পাওয়া আট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ছবি : এনটিভি

চা শিল্পে অবদান রাখায় এবার জাতীয় চা দিবসে প্রথমবারের মতো পুরস্কার পেলেন আট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আজ রোববার (৪ জুন) বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় চা দিবসের অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এই আট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কারের ট্রফি ও সদন তুলে দেন।

এবার জাতীয় চা দিবস পুরস্কার দেওয়া হয় একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা-বাগান হিসেবে শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগান, সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী হিসেবে হবিগঞ্জের মাধবপুর চা বাগান, শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্ট লিমিটেড, শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী পঞ্চগড় জেলার মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট, শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা-বাগান শ্রীমঙ্গলের জেরিন চা বাগান, বৈচিত্র্যময় চা-পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড়ের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড, দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা-প্রতিষ্ঠান ঠাকুরগাঁওয়ের সুলতান টি গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং শ্রেষ্ঠ চা-পাতা চয়নকারী (চা-শ্রমিক) চট্টগ্রামের ফটিক ছড়ির নেপচুন চা বাগান শ্রমিক উপলক্ষী ত্রিপুরা।

জাতীয় চা দিবসের অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চায়ের উন্নয়ন যাত্রা সুচিত হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। নানা দুর্যোগ কাটিয়ে দেশের চা শিল্প এখন এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ এখন প্রতিদিন কমপক্ষে এক কাপ চা পান করছে। সে হিসাবে দেশে যদি ১৭ কোটি মানুষ হয়ে থাকে তাহলে ১৭ কোটি কাপ চা পান হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা চায়ের আরও উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।’

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ শিল্পের সঙ্গে দেড় লক্ষাধিক শ্রমিক, টি স্টাফ, চা বাগান মালিক, চা ব্যবসায়ী, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ লাখ লাখ মানুষ জড়িত। সবার সমন্বিত প্রয়াসে এগিয়ে যাবে এ শিল্প।’

এর আগে মন্ত্রী দিনব্যাপী চা মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল পরিদর্শন করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানামুখী উদ্যোগের ফলে চা আজ দেশের অন্যতম টেকসই শিল্প খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ২০২১ সালে দেশে সর্বাধিক ৯৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র থেকে চায়ের ২৩টি জাত আবিষ্কার হয়েছে। দেশের চায়ের উৎপাদন বাড়াতে পাহাড়ি অঞ্চলের পাশাপাশি এখন সমতলেও চা চাষ হচ্ছে। এবং সমতলের চা উৎপাদনও আশাব্যঞ্জক।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইফ সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি কামরান টি রহমান, টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শাহ মঈনুদ্দিন হাসান ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

আরও বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ বলেন, ‘চা শিল্পের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তিনি এই শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যা চা শ্রমিক ও চা শিল্পের জন্য মঙ্গল বয়ে এনেছে।’

আব্দুস শহীদ  আরও বলেন প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের অত্যন্ত ভালো বাসেন এজন্য তিনি বার বার ছুটে আসেন চা শ্রমিকদের কাছে। বঙ্গবন্ধু যখন চা বোর্ডে চেয়ারম্যান ছিলেন তখন তিনি একাধিকবার শ্রীমঙ্গলে এসেছেন। চায়ের উন্নয়নে গ্রহণ করেছিলেন বিভিন্ন পদক্ষেপ।’

বাংলাদেশ চা বোর্ডের শ্রীমঙ্গলের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক জানান, জাতীয় চা দিবসটি সাধারণত ঢাকায় হয়ে থাকে। তবে এবার প্রথম এটি চা বাগানবেষ্টিত মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর ফলে জাতীয় চা দিবস অনুষ্ঠানে চা শ্রমিক, চা বাগান স্টাফ, চা বাগান মালিক, স্থানীয় সুধীজনসহ নানা শ্রেণিপেশান মানুষ অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন।

ড. রফিকুল হক আরও জানান, সিলেটের মালনিছড়া চা বাগানে ১৮৫৪ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করা হয়। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে চা শিল্প বিকশিত হতে থাকে। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ব্রিটিশ শাসনাধীন উপমহাদেশের এ অঞ্চলে চা শিল্পের অগ্রগতি মূলত ব্রিটিশদের মাধ্যমেই হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ২৩ অক্টোবর ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

চা শিল্পে জাতির পিতার অসামান্য অবদান ও চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর যোগদানের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০ সালের ২০ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪ জুনকে ‘জাতীয় চা দিবস’ ঘোষণা করা হয়।

সব শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্থানীয় এবং ঢাকা থেকে আসা শিল্পীরা।