সাজা পেলেন আলমগীর, কারাভোগ করছেন আল আমিন!

Looks like you've blocked notifications!
হাইকোর্টের ফাইল ছবি এনটিভির

শুধু বাবার নামের সঙ্গে আসামির বাবার মিল থাকায় সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামির পরিবর্তে জেল খাটছেন আল আমিন নামের এক কলেজ ছাত্র। এরপর বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে গড়ালে হাইকোর্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার (৭ জুন)  রুলসহ এ আদেশ দেন। রুলে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রংপুরের ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি), গঙ্গাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও রংপুরের জ্যেষ্ঠ জেল সুপারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য।

এ বিষয়ে অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, বুধবার (৭ জুন) ২০১৫ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক মো. রোকনুজ্জামান পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। দণ্ডপাওয়া ব্যক্তিরা হলেন—গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের আবুজার রহমান (২৮), আলমগীর হোসেন (২৭), নাজির হোসেন (৩২), আবদুল করিম (২৯) ও আমিনুর রহমান (২৯)। তাদের মধ্যে আলমগীর পলাতক রয়েছেন।’

সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আলমগীর গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের মো. হান্নানের পুত্র। কিন্তু এ মামলায় কারাগারে থাকা আল আমিন গঙ্গাচড়া উপজেলার হাজিরপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল হান্নানের ছেলে। তাকে গত ১৮ মার্চ রাতে রংপুরের সিওবাজার মসজিদের ছাত্রাবাস থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আল আমিন ২০১৫ সালে ওই ঘটনার সময় স্কুলে অধ্যয়নরত ছিলেন। জন্ম সনদ অনুযায়ী আল আমিন জন্ম ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি। তিনি ২০১১ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি), ২০১৫ সালে জেএসসি, ২০১৮ সালে এসএসসি, ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আদিতমারী সরকারি কলেজে ভর্তি হন। আল আমিন বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

এদিকে, গত ৩০ মার্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে গ্রেপ্তারকৃত আল আমিনকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ন্যায়বিচারের পেতে মানবিক সহযোগিতা চেয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করেন আল আমিনের ভাই আলী হোসাইন। এরপর এ বিষয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে গত ২৮ মে আল আমিনের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করেন আলী হোসাইন।

ওই আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল বুধবার আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়ছেন। ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপিসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ মে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা ও মা লালমনিরহাটে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। এ সময় ওই কিশোরী ও তার ভাগ্নে বাড়িতে একা ছিল। এ সুযোগে আবুজার সহযোগীদের নিয়ে সন্ধ্যায় ওই কিশোরীর বাড়িতে যান এবং তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পাশের একটি খেতে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যান তারা। ওই দিন রাতে কিশোরীর বাবা-মা বাড়িতে ফিরে মেয়েকে না পেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। পরের দিন সকালে বাড়ির অদূরে একটি খেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল ইসলাম তদন্ত শেষে আবুজারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। প্রায় সাত বছর আদালতে বিচার চলার পর ১০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেন রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান।