৬১ বছর পর স্কুলের বকেয়া বেতন পরিশোধ!

Looks like you've blocked notifications!
ঝিনাইদহের শৈলকুপার উপজেলার ফুলহরি হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সোহরাব হোসেন বিশ্বাস ৬১ বছর পর বকেয়া ১৬ টাকা বেতনের পরিবর্তে ৩০০ টাকা পরিশোধ করে দেনামুক্ত হচ্ছেন। ছবি : এনটিভি

৬১ বছর পর বিদ্যালয়ের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ। তিনি ঝিনাইদহের শৈলকুপার উপজেলার ফুলহরি হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর এই ব্যতিক্রমী ঘটনা নৈতিকতার নজিরবিহীন ও অনন্য দৃষ্টান্ত বলে সাড়া ফেলেছে সারা এলাকায়। বিদ্যালয়ে হাজির হয়ে তিনি নিজে এই বকেয়া বেতন পরিশোধ করেন।

নৈতিকতার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এই ব্যক্তি উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামের সোহরাব হোসেন বিশ্বাস।

স্থানীয় ছাত্র আশিকুর রহমান বলেন, ‘সোহরাব হোসেন বিশ্বাস যা করেছেন তা অনন্য দৃষ্টান্ত। এমন ঘটনা নবীন-প্রবীণদের জন্য বিরাট শিক্ষনীয়। আমার জীবনে দেখা সেরা একটি ভালো খবর।’

এলাকাবাসী সম্রাট হোসেন বলেন, ‘কিছু খবর দেখলে বা শুনলে ভালো লাগে। এই খবরটি তারই একটি। বৃদ্ধ বয়সে সোহরাব হোসেন বিশ্বাস যা করে দেখালেন, তা অবিশ্বাস্য। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি সারা জীবন তাদের পাথেয় হয়ে থাকবে।’

৮০ বছরের বৃদ্ধ সোহরাব হোসেন বিশ্বাস জানান, ১৯৬২ সালে তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। সবে বিয়ে করেছেন। ইচ্ছে হলো পড়াশোনা করার। এর আগে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছিলেন। তখন বাড়ির কাছে হাইস্কুল ছিল না। পাঁচ-ছয় মাইল দূরের ফুলহরি হাইস্কুলে গিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। তখন ষষ্ঠ শ্রেণির মাসিক বেতন ছিল ৪ টাকা। তিনি ছয় মাস ওই বিদ্যালয়ে পড়েন। অর্থাভাবে এরই মধ্যে চার মাসের বেতন বকেয়া পড়ে যায়। বেতন বকেয়ার জন্য পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরে পড়াশোনা ছেড়ে তামাক ও সুপারির ব্যবসা শুরু করেন। এখন তাঁর বয়স ৮০ বছর। জীবন সায়াহ্নে এসে তাঁর ইচ্ছে জাগে মৃত্যুর আগে সব ধার-দেনা পরিশোধ করবেন। সবার বকেয়াই পরিশোধ করেছেন। একপর্যায়ে তাঁর মনে পড়ে, ফুলহরি হাইস্কুলে তাঁর চার মাসের বেতন ১৬ টাকা বকেয়া আছে। ৬১ বছর পর বকেয়া ১৬ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা পরিশোধ করে দেনামুক্ত হয়েছেন।

বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী হাদিকুর রহমান বলেন, ‘সোহরাব হোসেনের কথায় আমরা সবাই বিস্মিত হয়ে যাই। পরে তাঁর ইচ্ছেমতো ৩০০ টাকা জমা নিয়ে রশিদ দিয়েছি।’

বিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণ প্রসাদ সাহা বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরের দিকে একজন বয়স্ক ব্যক্তি স্কুলে উপস্থিত হয়ে নিজেকে প্রাক্তন ছাত্র পরিচয় দেন। তারপর তাঁর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। তিনি ৮০ বছর বয়সী সোহরাব হোসেন। তাঁর কাছে বকেয়া বেতন হিসেবে বিদ্যালয়টির পাওনা ছিল ১৬ টাকা। ৬১ বছর পর তিনি পরিশোধ করেন ৩০০ টাকা। অফিস রুমে গিয়ে নিজে ৩০০ টাকা জমা দেন তিনি।’